উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: OBC সংরক্ষণ নিয়ে উত্তেজনা ছড়াল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায়। ধর্মের ভিত্তিতে নয়, আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করেই, OBC-র ক্য়াটিগরি করা হয়েছে। আজ বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এ নিয়ে সরকারের অবস্থান ব্য়াখ্য়া করলেন মুখ্য়মন্ত্রী। পাল্টা সংখ্য়ালঘু তোষণের অভিযোগ তোলেন শুভেন্দু অধিকারী। বলেন, এটা মুসলিম লিগের সরকার হয়ে গেছে। ওবিসি সংরক্ষণ ইস্যুতে মঙ্গলবার তপ্ত হয়ে ওঠে বিধানসভা। নতুন করে সংরক্ষণ তালিকা প্রকাশ নিয়ে বিধানসভায় বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরই বিরোধী দলনেতা বক্তব্য রাখার জন্য হাত তুলে আবেদন জানান। কিন্তু তাঁকে বিধানসভায় বলতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এরপরই বিধানসভার গেটের বাইরে বেরিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি বিধায়করা।
আরও পড়ুন, দিল্লির বহুতলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, প্রাণ বাঁচাতে বাবা ও ২ সন্তানের ঝাঁপ, ৩ জনেরই মৃত্যু !
আজকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায়, ওবিসি নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, এবং যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টেও মামলা চলছে, সেই প্রসঙ্গটি উথ্থাপন করেন। এবং এই ওবিসি মামলার সংরক্ষণে কী কী সমস্যায় সরকারকে পড়তে হয়েছে, তারও তিনি বিস্তারিত ব্যাক্ষা দিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি জানান, ওবিসি সংরক্ষণের বিষয়ে রাজ্য সরকার অত্যন্ত তৎপর। এবং রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই একটি সার্ভে করেছে। সার্ভে করে, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ, গরীব মানুষদের চিহ্নিত করেছে।মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এনিয়ে তথ্যভিত্তিক ব্যাক্ষা করেন, যে কোন কোন অংশকে তিনি সামনে আনতে চান। এবং কাদেরকে এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হবে, সেই ভাবনার কথা এদিন বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী তুলে ধরেন।
তিনি যখন বক্তব্য রাখছিলেন, সেই সময় বিজেপি বিধায়করা উপস্থিত ছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় ১২-১৩ মিনিট কথা বলার পর শুভেন্দু অধিকারীও হাত তোলেন। দেখা যায়, অধ্যক্ষ তাঁকে বলা অনুমতি দেননি। এরপরেই ফাস্ট হাফে সভা শেষ হতেই সকলে বেরিয়ে যান। কিন্তু তখনও শুভেন্দুর নেতৃত্বে ফাঁকা বিধানসভায় দাঁড়িয়ে স্লোগান তোলেন বিজেপি বিধায়করা। তাঁদের অভিযোগ, OBC সংরক্ষণের যে তালিকা রাজ্য সরকার তৈরি করছে, সেটা মূলত মুসলিম সম্প্রদায়কে খুশি করার জন্য। তাঁদেরকেই OBC সংরক্ষণের তালিকায় বেশি করে জায়গা দেওয়া হয়েছে। এরপর তাঁরা বিধানসভার গেট পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন। যেহেতু মামলটা সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন বিষয়, সেই অবস্থায় কীকরে একজন মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় দাঁড়িয়ে, এই নিয়ে বিবৃতি দেন ? প্রশ্ন তোলেন এদিন বিজেপি বিধায়করা।
OBC সংরক্ষণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে এখনও ঝুলে রয়েছে মামলা। যার জেরে রাজ্যের অধিকাংশ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক স্তরে এখনও থমকে রয়েছে ভর্তিপ্রক্রিয়া!অন্য়ান্য অনগ্রসর শ্রেণি কারা, তা যাচাই করতে নতুন করে সমীক্ষার জন্য রাজ্য সরকারকে ৩ মাসের সময় দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।পরের মাসেই মামলার শুনানি। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে সংরক্ষণ তালিকা প্রকাশ নিয়ে বিধানসভায় বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ২০২৪-এর ২২ মে একটা অর্ডার দেয়। এই রায়ের ফলে বাংলার একটা বিশাল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী অসুবিধায় পড়ে।৮ মে ২০২৫, রাজ্য সরকার নতুন ক্যাটিগরি ইস্যু করেছে। গত ৩ জুন ওবিসি রিজারভেশন ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। ওবিসি সংরক্ষণ কোনও ধর্মের ভিত্তিতে করা হয়নি। ওবিসি সংরক্ষণ করা হয়েছে আর্থিকভাবে যাঁরা পিছিয়ে পড়েছেন সেই অনুযায়ী। মোট ১৪০টি সম্প্রদায়কে ওবিসি তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে ৬১টি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন এবং ৭৯টি রয়েছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। এরপরই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু বক্তব্য রাখার জন্য হাত তুলে আবেদন জানান। কিন্তু তাঁকে বিধানসভায় বলতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
বিধানসভার বাইরে এসে এদিন শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’ ১৮০ টি কমিউনিটিকে OBC করেছে ১১৯ টা মুসলমান। এই সরকারটা মুসলমানের সরকার। মুসলিম লিগের সরকার। মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে হাইকোর্টকে মিথ্যে বলেছেন, কেস পেন্ডিং আছে। সুপ্রিম কোর্টে ১৫ জুলাই ডেট আছে। আজ হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্ট পেন্ডিং থাকা অবস্থায়, আগে থেকে নোটিস না দিয়ে, কপি প্রত্যেকটা এমএলএ-কে না দিয়ে, বিরোধীপক্ষকে ২ মিনিট সময় দেয়নি। চোর মমতা। চাকরি চোর মমতা। গরুচোর মমতা। হিন্দু ওবিসিদের অধিকার চুরি রা মমতা বক্তব্য রেখেছেন।… আমরা ছাড়ব না। এখানে লড়াই হবে। আইনি লড়াই হবে। হিন্দু OBC অধিকার রক্ষার লড়াই হবে।’