জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: গোটা দেশ কেঁপে উঠেছে মেঘালয়ের অভিশপ্ত হানিমুন! ইন্দোরের নবদম্পতি রাজা রঘুবংশী ও সোনমের যাওয়ার কথা ছিল সিমলায়… কিন্তু অমোঘ নিয়তি-ই যেন রাজা-সোনমকে টেনে নিয়ে গেল মেঘালয়ে। ইতিমধ্যেই রাজার দেহ ও তাঁর বাইক উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে রক্তের দাগ লাগা একটি রেইনকোটও। আর এবার সামনে এল ‘অন্তর্ধান’ রহস্যের শেষ ১২ ঘণ্টার হাড়হিম তথ্য!
২৩ মে, রাজা-সোনম রাতারাতি উবে যাওয়ার আগে, মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড়ের নোংরিয়াত গ্রামে ১২ ঘণ্টা কাটান। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীদের এটাই মত। রাজার দেহ খাদে পাওয়া গেলেও, তাঁর স্ত্রীর খোঁজ এখনও চলছে। পুলিস এবং জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী (এনডিআরএফ) সোনমকে খুঁজছে। তাঁর পরিবার বলেছে যে, তাঁরা বিশ্বাস করেন যে, তাঁদের মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে! এবং তাঁরা মেয়েকে ফিরে পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।
আরও পড়ুন: নিখোঁজের দিন তিন পুরুষের সঙ্গে… রাজা খুন, সোনম এখনও বেপাত্তা! মেঘালয়ে গাঢ় হচ্ছে রহস্য…
২১শে মে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের এক গেস্টহাউসে নবদম্পতি উঠেছিলেন। পরের দিন তাঁরা একটি স্কুটি ভাড়া করে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র সোহরা (চেরাপুঞ্জি) যান। পূর্ব খাসি পাহাড়ের মাওলাখিয়াত গ্রামে পৌঁছানোর পর, তাঁরা স্কুটিটি স্থানীয় সম্প্রদায় দ্বারা পর্যটকদের জন্য পরিচালিত এক পার্কিং স্পটে রাখেন এবং নোংরিয়াত গ্রামের হোমস্টেতে ট্রেক করার জন্য এক স্থানীয় গাইড ভাড়া করেন। মাওলাখিয়াত থেকে নোংরিয়াত যাওয়ার জন্য তাঁদের যে গাইড নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি বলেন, এই যাত্রা ৩ ঘণ্টার, ৩০০০ ধাপ পেরোতে হয়।
গাইড ভাকুপার ওয়ানশাই বলেন, ‘২২ মে ওই দম্পতি আমাদের ফোন করেছিলেন, তখন প্রায় ওই বিকেল সাড়ে তিনটে হবে, কিন্তু আমি তাঁদের ফেরাইনি। নোংরিয়াতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। শিপাড়া হোমস্টেতে তাদের নামিয়ে দেওয়ার পর, আমরা চলে গেলাম। আরেক গাইড, অ্যালবার্ট পিডিই তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। আমরা পরের দিনও (২৩ মে) পরিষেবা দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তাঁরা প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন যে, তাঁরা রুট জানেন।’ওয়ানশাই তাঁর পুলিসি জবানবন্দিতে বলেছেন যে, সোনমই তাঁদের সঙ্গে বেশিরভাগ কথা ইংরেজিতে বলেছিলেন। হোমস্টে পরিচালনাকারী মহিলা জানিয়েছেন, দম্পতি এবং দুই গাইড বিকেল ৫.৩০ মিনিটে নোংরিয়াত গ্রামের শিপাড়া হোমস্টেতে এসেছিলেন।
হোমস্টে মালিক সিয়ান্তি সোখলেট বলেন, ‘২২ মে, দু’জন অতিথি শিপাড়া হোমস্টেতে থাকতে এসেছিলেন। তাঁরা গাইডদের সঙ্গে এসেছিলেন। আমি সঠিক সময় মনে করতে পারছি না। তবে আমার মনে হয় বিকেল ৫টা নাগাদ। তাঁরা যখন এখানে এসে পৌঁছালেন, আমি তাঁদের ঘরটি দেখিয়েছিলাম এবং তাঁরা থাকতে রাজি হয়েছিলেন। আমরা যখন এখানে বসে ছিলাম, তখন তাঁরা গাইডের জন্য রুমের ভাড়া এবং ফি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। এবং কখন টাকা দিতে হবে জানতে চেয়েছিলেন। যার জবাবে আমি বলেছিলাম, আজকেই। আমি টাকা নিয়ে তাঁদের রেজিস্টারে সই করতে বলেছিলাম এবং তাঁদের ঘরটি দেখিয়েছিলাম। তারা চেক ইন করে ঘরে তালা দিয়ে লিভিং রুট ব্রিজ দেখতে চলে গিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পরে তাঁরা ফিরে এসেছিলেন। ইতিমধ্যেই অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। আমরা খাবার তৈরি করে তাঁদের ঘরে নিয়ে গিয়েছিলাম। তাঁরা রাতের খাবার খেয়ে রাতে বিশ্রাম নিয়েছিলেন।’
শিপাড়া হোমস্টে নোংরিয়াতের ডাবল-ডেকার লিভিং রুট ব্রিজের কাছে অবস্থিত। সিয়ান্তি সোখলেট আরও বলেন, ”পরের দিন সকালে, আমি ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ঘুম থেকে উঠি। ওই দম্পতি বলেছিলেন যে, তাঁরা তাড়াতাড়ি চেক আউট করবেন। তাই আমি জিজ্ঞাসা করলাম তাঁরা কি ব্রেকফাস্ট করতে চান? তাঁরা জানান যে, এখন অনেক ভোর এবং তাঁদের খিদে নেই। তাঁরা আগের রাতের খাবারের দাম দিয়েছিলেন এবং রেজিস্টার থেকে সাইন আউট করেছিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, তাঁরা রাস্তা চিনতে পারবে কিনা! তাঁরা সিঁড়ির দিকে ইশারা করে উত্তর দিয়েছিলেন।’ ২৩ মে সকাল ৬টায় এই দম্পতি হোমস্টে থেকে বেরিয়ে যান।
আরও পড়ুন: মেঘালয়ে অভিশপ্ত হানিমুন! সোনমের সাদা শার্ট মেলে… CCTV ফুটেজ বাড়িয়ে তুলল ‘অন্তর্ধান’ রহস্য…
শেষ ব্যক্তি যিনি রাজা-সোনমকে দেখেছিলেন, তিনি ছিলেন গাইড অ্যালবার্ট পিডি। রাজ্য পুলিসে র জিজ্ঞাসাবাদের সময়, তিনি বলেছিলেন যে, তিনি সকাল ১০ টায় দম্পতিকে মাওলাখিয়াত গ্রামের দিকে ৩০০০ সিঁড়ি বেয়ে উঠতে দেখেছেন এবং তাঁদের সাথে তিনজন পুরুষ পর্যটক ছিলেন বলেই ধারণা। দেখা যাক মেঘালয়ে নবদম্পতির ‘অন্তর্ধান’ রহস্যের কবে কিনারা হয়!
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)