কলকাতা: বোলপুর থানার IC-কে কদর্য ভাষায় হুমকি দিয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। আর সেই হুমকি দেখানোয় পুলিশের চিঠি পেল এবিপি আনন্দ। ৬ দিনেও অনুব্রত অধরা। তবু নিষ্ক্রিয় বলায় আপত্তি পুলিশের।
IC-কে এই কদর্য ভাষায় হুমকি দিয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদটুকু করা হয়নি। অথচ, এবিপি আনন্দ সেই অডিও ক্লিপ কেন বারবার দেখাচ্ছে, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কেন প্রশ্ন তুলছে, তা নিয়ে আপত্তি তুলে এবিপি আনন্দর সম্পাদক সুমন দে-কে দু’পাতার চিঠি পাঠাল পুলিশ। চিঠিতে তারা লিখেছে, ‘আমরা আপনাকে আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি যে, আপনি বিতর্কিত অডিও-ক্লিপটি ক্রমাগত প্রচার করবেন না এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আপনার ব্যক্তিগত মূল্যায়ন প্রকাশ করবেন না। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার, আপনার এই লাগাতার চেষ্টা কাঙ্খিত নয়।আইনের দৃষ্টিতে এর সংযম প্রয়োজন।’
অর্থাৎ পুলিশের বার্তা পরিষ্কার। অনুব্রত মণ্ডলের কদর্য আক্রমণের এই ভাইরাল অডিও ক্লিপ যেন বারবার না দেখানো হয়। ৬ দিনে অনুব্রত মণ্ডলকে যারা জিজ্ঞাসাবাদ করেনি, সেই পুলিশকে কেন নিষ্ক্রিয় বলা হয়েছে, তা নিয়েও ঘোর আপত্তি তাদের। এবিপি আনন্দর সম্পাদক সুমন দে-কে এই চিঠিতে বীরভূম জেলা পুলিশ লিখেছে, ‘FIR দায়েরের পর, তদন্তকারী অফিসারের সামনে হাজির হওয়ার জন্য তাঁকে ৩০.০৫.২০২৫ তারিখে আইন অনুযায়ী নোটিস দেওয়া হয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, আপনি একটি প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমের অংশ হয়ে, অনুব্রত মণ্ডলের বিতর্কিত অডিও-ক্লিপটি বারবার সম্প্রচার করছেন এবং মামলা সংক্রান্ত তথ্য় এবং পুলিশ এখনও অবধি যে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে, তা ন্যূনতম যাচাই না করেই, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলছেন। আপনি চ্য়ানেলে ক্রমাগত যে অভিযোগ তুলেছেন, তা তথ্য়গতভাবে ভুল, অন্য়ায্য়, যাচাই না করা এবং অসত্য। এই ধরনের অভিযোগে কারও ভাল হবে না। বরং এতে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে। আপনি কোনও ভাল উদ্দেশ্য়ে এই অভিযোগ তোলেননি বরং এতে মিশে রয়েছে বিদ্বেষ।’
অনুব্রত মণ্ডলকে গত শনি ও রবিবার তলব করেছিল পুলিশ। কিন্তু, অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সেখানে যাননি তিনি। অথচ, শনিবারই দিব্য়ি তৃণমূলের পার্টি অফিসে পৌঁছে গেছিলেন তিনি। এই আবহেই এবিপি আনন্দর সম্পাদককে দেওয়া চিঠিতে পুলিশই লিখেছে, ‘নোটিসের জবাবে, চিকিৎসার কারণ উল্লেখ করে সময় চেয়েছিলেন অভিযুক্ত। তিনি প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জমা দিয়েছিলেন। যাতে বলা হয়েছে, চিকিৎসক তাঁকে বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছেন। মেডিক্যাল সার্টিফিকেটে দেওয়া তথ্য় দেখে, তদন্তকারী অফিসার অভিযুক্তর অবস্থা জানতে পারেন এবং তদন্ত চালিয়ে নিয়ে যান। তাই, তদন্ত থমকে রয়েছে এবং পুলিশ বিষয়টা নিয়ে চুপচাপ বসে আছে, সামগ্রিকভাবে এটা বলা ভুল। এটা আইনের নির্দিষ্ট মাপকাঠি মেনেই তদন্ত চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তা থামালে চলবে না।’
অনুব্রত মণ্ডলের অডিও ক্লিপ না চালাতে বলার পাশাপাশি চিঠির শেষ অংশে লেখা হয়েছে, ‘আমাদের আশা ও বিশ্বাস, এই বার্তা পাওয়ার পর, আপনি ওই মামলার তদন্ত সম্পর্কে, ভুল মূল্যায়ন থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন। নয়তো আমরা ধরে নেব যে, এই সম্প্রচার ইচ্ছাকৃত এবং পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা। তখন পুলিশের বিরুদ্ধে এধরণের ইচ্ছাকৃত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের ধারাবাহিক প্রচারের জন্য, আপনার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব। সেক্ষেত্রে আর কোনও রকম যোগাযোগ করা হবে না।’