Turkey Pakistan Relation: একবার নয়, বিপদের সময় বার-বার এই দেশের (India Turkey Relation) জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত। বন্ধু ভেবে বিপর্যয় মোকাবিলা, মেডিক্যাল (Medical) ছাড়াও দিয়েছে আর্থিক সাহায্য (Finance)। অথচ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সেই ভারতেরই ক্ষতি চাইল তুরস্ক (Turkey)।
ভারত পাকিস্তান আক্রমণ করতেই সামনে এসেছে তথ্য
‘অপারেশন সিঁদুরের’ পর ভারতের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে তুরস্ক। পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়ে সামরিক অস্ত্র পাঠিয়েছে এর্দোগানের দেশ। প্রতিবেদন বলছে, যুদ্ধের সময় পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যে অস্ত্র ব্যবহার করেছিল, তার বেশিরভাগই চিন ও তুরস্ক সরবরাহ করেছিল। এর মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, ট্যাঙ্কার ও নৌবাহিনীর জাহাজ ছিল। তবে ভারত-তুরস্ক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিহাস বলছে- ভারতই সবসময় তুরস্ককে বিপদের সময় সাহায্য করেছে। দেখা যাক কোন পরিস্থিতিতে ভারত তুরস্ককে একজন প্রকৃত বন্ধুর মতো সাহায্য করেছে।
ভূমিকম্পের সময় ‘অপারেশন দোস্ত’ চালিয়েছিল ভারত
২০২৩ সালে তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ভারত ‘অপারেশন দোস্ত’-এর অধীনে তুরস্ককে অনেক সাহায্য করেছিল। দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে (সিরিয়ার সীমান্তের কাছে) ও মধ্য তুরস্কের আকিনোজু থেকে চার কিলোমিটার দূরে ১২ ঘন্টার ব্যবধানে দুটি ভূমিকম্প হয়। তাদের তীব্রতা ছিল ৭.৮। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তুরস্ক অনেক প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি হয়। সেই সময়ে ভারত চিকিৎসা ও উদ্ধারকারী দল পাঠিয়ে তুরস্ককে সাহায্য করেছিল। সেই সময় ভারত ১৫০ সদস্যের তিনটি এনডিআরএফ দল, একটি মেডিক্যাল টিম, ত্রাণ সামগ্রী ও স্নিফার ডগ পাঠিয়েছে।
কীভাবে সাহায্য করেছে ভারত
এর ফলে ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়া মানুষদের উদ্ধারে সাহায্য হয়েছে। এর পাশাপাশি আহতদের ঘটনাস্থলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তৈরি ৩০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ভারত ৯৯ সদস্যের একটি মেডিকেল টিমের সঙ্গে প্রচুর ওষুধ, তাঁবু, কম্বল, খাদ্যসামগ্রীও পাঠিয়েছে। সেই সময় ভারতে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ফিরাত সুনেলও ভারতকে তুরস্কের ‘প্রকৃত বন্ধু’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
মারমারা ভূমিকম্পে পাশে দাঁড়িয়েছিল ভারত
১৯৯৯ সালের অগস্টে তুরস্কের মারমারা সাগরে ভূমিকম্পের কম্পন অনুভূত হয়েছিল। এর ফলে ইস্তাম্বুলে ৪০ কিলোমিটার দূরে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। এই সময় প্রায় ১৭,০০০ মানুষ মারা যায়। লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। এটি তুরস্কের ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী ভূমিকম্পগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল। সেই সময়েও ভারত তুরস্কের পাশে দাঁড়িয়েছিল। ভারত থেকে তুরস্কে খাদ্য, জল, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়েছিল। ভারত ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযানের জন্য জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনীর (এনডিআরএফ) দলও পাঠিয়েছিল।
করোনার সময়ে আর্থিক সাহায্য
২০২০ সালে যখন পুরো বিশ্ব করোনার কবলে ছিল, তখন ভারত বিশ্বের অনেক দেশকে যথাসম্ভব সাহায্য করেছিল। এই পর্বে তুরস্কের নামও অন্তর্ভুক্ত। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তুরস্ককে পিপিই কিট, ভ্যাকসিন, ভেন্টিলেটরের মতো সুবিধা প্রদান করে ভারত তুরস্ককে অনেক সাহায্য করেছিল। শুধু তাই নয়, ২০২০ সালের অগাস্টে ভারত এই ভয়াবহ মহামারী মোকাবিলায় তুরস্ককে ১০০ মিলিয়ন ডলারও দিয়েছিল।
ঠান্ডা যুদ্ধের সময় পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত
১৯৭০-এর দশকে ঠান্ডা যুদ্ধের সময় ভারত তুরস্ককে সাহায্য করেছিল। সেই সময় ভারত অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে তুরস্ককে সাহায্য করেছিল। এর মধ্যে কৃষি, শিক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য অনুদান এবং ঋণ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় হাত বাড়িয়েছে ভারত
১৯১৪-১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তুরস্ক (তৎকালীন অটোমান সাম্রাজ্য) ব্রিটিশ ও অন্যান্য মিত্র দেশগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করছিল। ভারত তখন ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল, কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ শাসনের তুরস্ককে বিভক্ত করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ১৯১৯-১৯২২ সালের মধ্যে ভারতীয় মুসলমানরা খিলাফত আন্দোলন শুরু করে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরাও এই আন্দোলনে যোগ দেয়। সকলেই একসঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে তুরস্কের জন্য ক্ষতিকারী নীতির বিরোধিতা করে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় সাহায্য
ভারত গ্লোবাল ট্রেড ব্লক ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় তুরস্কের অন্তর্ভুক্তিকে সমর্থন করেছিল। শুধু তাই নয় ভারত ইউরোপীয় ইউনিয়নে তুরস্কের অন্তর্ভুক্তিকেও সমর্থন করেছিল।
আরও দেখুন