কলকাতা: গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। শেষ পর্যন্ত বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন জন বার্লা। বৃহস্পতিবার তাঁকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ালেন সুব্রত বক্সি এবং অরূপ বিশ্বাস। বছর ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর তৃণমূলে আগমনে রাজ্য বিজেপি ধাক্কা খেল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। (John Barla)
বিজেপি-তে বেশ কিছু দিন ধরেই বিক্ষুব্ধ ছিলেন জন। এদিন তৃণমূলে যোগ দিয়ে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ। আজ উনি আমাকে এত বড় সুযোগ দিয়েছেন। নিজের সমাজের জন্য কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন আমাকে। কেন আমি এই সিদ্ধান্ত নিলাম, জানাতে চাই। ছ’-সাত মাস আগে থেকেই কথা চলছিল। দিদিও মাঝে ফোন করেছিলেন। কাজ করতে বলছিলেন। আমি চাইছিলাম, নিজের ক্ষেত্র, চা-বাগান নিয়ে যেমন করতাম…মন্ত্রী ছিলাম যখন কাজ করতে গিয়ে বাধা পেতাম।” (West Bengal BJP)
জন বলেন, “রেলের জমিতে ১০০ শতাংশ অনুদান নিয়ে, ১৬০ কোটির হাসপাতাল তৈরি করতে গিয়েছিলাম। রেল জমিও বেছে দিয়েছিল। শুধু মউ স্বাক্ষর বাকি ছিল। কিন্তু এখন যিনি বিরোধী দলনেতা, উনি যেভাবে কাজ আটকে দেন…মানুষ আশীর্বাদ দিয়ে আমাকে মন্ত্রী বানান। কিন্তু নিজেদের দলের লোকই, এখনকার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী…এখান থেকে ফোন গেল আর আমাকে আটকে দেওয়া হল। এভাবে উন্নয়নমূলক কাজ আটকে দেওয়া হলে কে এমন দল করবে? মানুষ আমাকে নির্বাচিত করে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু আমাকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছিল না। এমন দল কেন করব, যারা আমাকে বাধা দেয়?”
জনের দলে যোগ দেওয়া নিয়ে তৃণমূল জানিয়েছে, তৃণমূলস্তরে কাজ করার যে অভিজ্ঞতা রয়েছে জনের, বিশেষ করে আলিপুরদুয়ারে, চাবাগানের শ্রমিকদের মধ্যে তাঁর যে গ্রহণযোগ্যতা, তা দলকে শক্তিশালী করে তুলবে বলেই আশাবাদী তারা। জনের হাতে দলের পতাকা তুলে দেওয়ার আগে অরূপ বলেন, “বিজেপি-তে বীতশ্রদ্ধ হয়ে মা-মাটি-মানুষের দলে যোগ দিচ্ছেন কেন, তা নিজেই বলবেন উনি। একটা একটা করে উইকেট পড়ছে। চা-বাগানের আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত তিনি। ইউনিয়ন নেতা তিনি, আদিবাসী নেতাও। জনমানসে ভাবমূর্তি অত্যন্ত ভাল। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। দলনেত্রী তাঁকে মা-মাটি-মানুষের হয়ে কাজ করতে অনুমোদন দিয়েছেন।” সুব্রত এদিন বলেন, “জন বার্লার হাত ধরে চা বাগানে নিশ্চিত ভাবে আমাদের দল শক্তিশালী হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁকে রাজ্য কমিটিতে কাজ করাবেন, চা বাগানেরও দায়িত্ব দেওয়া হবে।”
কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ জন। গত লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে টিকিট দেয়নি বিজেপি। পরিবর্তে টিকিট দেওয়া হয় মনোজ টিগ্গাকে। আর সেই থেকেই পদ্মশিবিরে বেসুরো বাজছিলেন বার্লা। সেই থেকেই তাঁকে নিয়ে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। জানুয়ারি মাসে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানেও আমন্ত্রিত ছিলেন তিনি। সেই সময় প্রশ্ন করা হলে জানান, মুখ্যমন্ত্রীকে চা-বলয় এবং জনজাতিদের সমস্যার কথা জানাতে গিয়েছেন। আর তার চার মাসের মাথাতেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন জন।
আরও দেখুন