কলকাতা: চাকরিহারাদের বিকাশভবন অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি। বিকাশভবনের গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে গেলেন চাকরিহারারা। তৃণমূল নেতা তথা বিধাননগর পুরনিগমের চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্তকে দেখে বিক্ষোভ চরমে উঠল। তাঁকে লক্ষ্য করে ‘চোর’ স্লোগান ধেয়ে এল। পুলিশের সঙ্গেও ধস্তাধস্তি হয় চাকরিহারাদের। বেশ কয়েক জন অসুস্থও হয়ে পড়েন। চাকরি ফেরানোর দাবিতে এদিন বিকাশভবন অভিযানে যান চাকরিহারারা। (SSC Protests)
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি চলে গিয়েছে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা। শিক্ষাক-শিক্ষিকাদের জন্য নতুন করে পরীক্ষার বসায় সুযোগ থাকলেও, শিক্ষাকর্মীদের সেই সুযোগ নেই। লাগাতার সেই নিয়ে বিকাশভবনের সামনে আন্দোলন করছিলেন। বৃহস্পতিবার বিকাশভবন ঘেরাওয়ের ডাক দেন তিনি। আর তাকে ঘিরেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। (SSC Scam)
চাকরিহারাদের বিক্ষোভের সামনে আজ পুলিশকে কার্যত অসহায় দেখায় বিকাশভবনে। বিকাশভবনের গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে যান চাকরিহারারা। পুলিশ বাধা দিতে গেলে ধস্তাধস্তি বাধে। ধাক্কাধাক্কিতে চাকরিহারাদের মধ্যে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন, বিকাশভবন আজ কার্যত দখল করে নেন চাকরিহারারা। তাঁর সাফ জানিয়েছেন, নতুন করে পরীক্ষায় বসবেন না। রাজ্য সরকারের জন্য চাকরি গিয়েছে, রাজ্যকেই চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে।
বিকাশভবন রাজ্যের প্রশাসনিক দফতর। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী থেকে অন্য মন্ত্রীদের দফতর সেখানে। তাঁরা যে গেট দিয়ে ভিতরে ঢোকেন, আজ চাকরিহারাদের বিক্ষোভে সেই গেট অবরুদ্ধ হয়ে যায়। ধুন্ধুমারের জেরে বেনজির পরিস্থিতি তৈরি হয় সেখানে। রাজ্য সরকারের তরফে আদালতে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানানো হলেও, চাকরিহারাদের বক্তব্য, “আমাদের OMR শিটের মাধ্যমে, যোগ্য-অযোগ্যের তালিকা নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাক রাজ্য। একজন যোগ্যও যেন বঞ্চিত না হয়। মুখ্যমন্ত্রী কেন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। চাকরি চাই মমতা ব্যানার্জি। চোরের রানি। যোগ্যদের চাকরি বাঁচাতে হবে। আপনি চাকরি খেয়েছেন। চোরেরা শাস্তি পাক। আমাদের সঙ্গে অবিচার কেন হবে। অন্যের পাপের দায় আমরা কেন নেব?”
সেই বিক্ষোভের মধ্যেই এদিন বিকাশভবনে পৌঁছন বিধাননগর পুরনিগমের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা সব্যসাচী। নিজের কাছেই সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁকে দেখে ক্ষোভ আছড়ে পড়ে চাকরিহারাদের। ভিড়ের মধ্যে থেকে ওঠে ‘চোর’ স্লোগান। সব্যসাচীকে ধাক্কাও দেওয়া হয়। তাঁকে ভিড়ের মধ্যে থেকে বের করে নিয়ে যেতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। সব্যসাচী বলেন, “আমি আমার কাজে এসেছিলাম। কিছু জানি না। পুলিশ আমাকে ঢুকতে বারণ করেছে। ওরা একটা আবেগে করছে। রাজ্য সরকার দেখছে। মুখ্যমন্ত্রী রিভিউ পিটিশন করেছেন। ওদের আবেগকে সম্মান দেওয়ার যথাযথ চেষ্টা হচ্ছে। আদালতের ঊর্ধ্বে নই আমরা। আদালত যা বলেছে, করছি।
তবে বিকাশভবন থেকে বেরোতে গিয়েও বিপাকে পড়েন সব্যসাচী। তাঁর গাড়ির সামনে বসে পড়েন চাকরিহারারা। তাঁরা বলেন, “আমরা এমনিই মরে গিয়েছি। গাড়ি চালিয়ে দিন। টাকা দিয়ে চাকরি পাইনি আমরা। আমাদের সঙ্গে প্রতারণা হচ্ছে।” এর পর সব্যসাচী গাড়ি থেকে নেমে আসেন। তিনি জানান, তিনি বিকাশভবনের কর্মী নন। সরকার চেষ্টা করছে। মাথার উপর ঈশ্বর রয়েছেন। কিছু না কিছু পথ বেরোবে। এর পাল্টা চাকরিহারারা জানান, ঈশ্বর নন, রাজ্য সরকারকেই চাকরি ফেরাতে হবে।
আরও দেখুন