জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: মারা গেলেন ‘পেপে’! চেনেন না তো? ইনি হলেন উরুগুয়ের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। আসল নাম হোসে মুজিকা (Jose Mujica)। তবে তিনি ‘পেপে’ (Pepe) নামেই বেশি পরিচিত। ‘বিশ্বের দরিদ্রতম প্রেসিডেন্ট’ (World’s Poorest President) হিসেবও বিখ্যাত তিনি। ৮৯ বছর বয়সে মারা গেলেন। মুজিকার মৃত্যুর কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও জানা যায়নি। তবে, এ কথা ঠিক, তিনি দীর্ঘদিন ধরে খাদ্যনালির ক্যানসারে ভুগছিলেন।
আরও পড়ুন: Deadliest Earthquake: অবিশ্বাস্য! ১৮,৪০০ টি কম্পন! অসংখ্য ‘অ্যাকটিভ ফল্ট লাইনে’র উপরে দাঁড়িয়ে দেশ; তীব্র ভূমিকম্প মাত্র তিন…
আরও পড়ুন: India Pakistan Tension: ‘ভারতের ভয়ে’ দলে দলে বাড়ি পালাচ্ছেন পাকসেনারা! হাজার-হাজার সেনার পদত্যাগবন্যায় কুটোর মতো ভেসে গেলেন মুনির-শাহবাজ…
গেরিলা যোদ্ধা
২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত উরুগুয়ে শাসন করেছেন হোসে মুজিকা। গেরিলা যোদ্ধা নামেও তিনি পরিচিত! তাঁকে বলা হত বিশ্বের ‘সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট’। আসলে সাধারণ জীবনযাপন, ভোগবাদবিরোধী অবস্থান এবং সামাজিক সংস্কারের জন্যই তিনি বেশি খ্যাত। এসব কারণেই তিনি আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় বেশি পরিচিতি লাভ করেন। উরুগুয়ের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইয়ামানদু অরসি তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে হোসে মুজিকার মৃত্যুর খবর জানিয়ে লেখেন, ‘তুমি আমাদের যা দিয়ে গিয়েছ, দেশের মানুষের প্রতি যে গভীর ভালোবাসা তুমি দেখিয়েছ– সেজন্য তোমাকে ধন্যবাদ।’
‘বিশ্বের দরিদ্রতম প্রেসিডেন্ট’
কেন তাঁকে ‘বিশ্বের দরিদ্রতম প্রেসিডেন্ট’ বলা হয়? অনেক কারণ। আসলে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বিলাসবহুল প্রেসিডেন্ট ভবনে না থেকে নিজের গ্রামের বাড়িতেই স্ত্রী লুসিয়া তোপোলানস্কির সঙ্গে সাদামাটা জীবন কাটাতেন তিনি। শুধু তাই নয়, নিজের বেতনের বেশিরভাগটা দান করতেন! পুরনো ভক্সওয়াগেন বিটল গাড়ি চালাতেন। তাঁর এই আশ্চর্য সব আচরণই তাঁকে আন্তর্জাতিক ভাবে আলাদা করে দেয়। ৩৪ লাখ মানুষের একটি ছোট্ট দেশ উরুগুয়ে। এমন একটি দেশের নেতা হয়েও মুজিকা বিশ্বের নানা প্রান্তে আলোচনায় আসতেন।
টানেল খুঁড়ে পালান
১৯৬০-এর দশকে তিনি তুপামারোস ন্যাশনাল লিবারেশন মুভমেন্ট নামে একটি গেরিলা সংগঠন গড়ে তোলেন। এই গোষ্ঠী চুরি, অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের মতো সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। যদিও মুজিকা সবসময়ই দাবি করতেন, তিনি কাউকে হত্যা করেননি। কিউবান বিপ্লব এবং আন্তর্জাতিক সমাজতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই সংগঠন তখনকার উরুগুয়ের সরকারের বিরোধী এক আন্দোলন শুরু করে। এই সময়-পর্বে মুজিকাকে চারবার বন্দি করা হয়। ১৯৭০ সালে একবার গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন। দু’বার জেল ভেঙে পালান। একবার ১০৫ জন বন্দির সঙ্গে টানেল খুঁড়ে পালান, যা উরুগুয়ের ইতিহাসে অন্যতম বড় জেল-পালানোর ঘটনা হয়ে রয়ে গিয়েছে। ১৯৭৩ সালে সামরিক বাহিনী ক্যু করার পরে মুজিকাকে বন্দি রাখা হয়। প্রায় ১৪ বছর বন্দিদশায় কাটান। ১৯৮৫ সালে মুক্তি। মুক্তির পরে বলেছিলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হওয়াটা এর (মুক্তি পাওয়ার) কাছে কিছুই না।’ মুক্তির পরে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। আইনপ্রণেতা হিসেবে কাজ করেন। পরে ২০০৫ সালে ফ্রেন্তে আম্প্লিও জোট সরকারের মন্ত্রী হন। ২০১০ সালে ৭৪ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি।
এক সাক্ষাৎকারে মুজিকা বলেছিলেন, ‘তারা বলে আমি গরিব প্রেসিডেন্ট। না, আমি গরিব না। গরিব তারা, যারা আরও চায়, যারা কখনও থামে না।’ একবার বলেছিলেন, ‘বিশ্বটা পাগল হয়ে গিয়েছে, যদি তারা অবাক হয় একটা সাধারণ জীবন দেখে।’
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)