আবীর দত্ত, আশাবুল হোসেন, মুর্শিদাবাদ: হিংসা বিধ্বস্ত মুর্শিদাবাদে এবার অভয়া ক্লিনিক খুলল ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট। মুর্শিদাবাদের দাঙ্গার প্রতিবাদে আগেই পথে নেমেছিল অভয়া মঞ্চ। এবার দাঙ্গা বিধ্বস্ত এলাকায় গিয়ে মেডিক্য়াল ক্য়াম্প করলেন আর জি করের প্রতিবাদী ডাক্তাররা। আর সেই অভয়া ক্লিনিকে চিকিৎসা করাতে গেলেন জাফরাবাদের দুজন স্বজনকে হারানো পরিবারের সদস্য়। দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় মানুষদেরও হাহাকার শোনা গেল অভয়া ক্লিনিকে।
আরও পড়ুন, ‘ক্ষমা করো দয়াময়, ঈশ্বর-আল্লাহ’, কেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার ফেরাতে চাইছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ইয়াসিন পাঠান ?
হিংসায় নিহত হরগোবিন্দ দাসের মেয়ে যুথিকা দাস বলেন, আমার বাবাকে যে খুন করেছে তাদের আমরা শাস্তি চাই। দাঙ্গা-বিধ্বস্ত মুর্শিদাবাদের অভয়া ক্লিনিকেও, শোনা গেল স্বজনহারার এরকমই হাহাকার। তাঁদের পাশে দাঁড়ালেন আর জি কর-কাণ্ডের আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। দাঙ্গার আগুন কারও ঘর পুড়িয়েছে। কারও স্বজন কেড়ে নিয়েছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত মুর্শিদাবাদের মানুষগুলো বাধ্য় হয়েছেন, বাড়ি থেকে পালিয়ে, মালদার ক্য়াম্পে আশ্রয় নিতে। শুক্রবার তাঁদের চিকিৎসা পরিষেবা দিতে, সেখানে পৌঁছে গেলেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
এদিন মুর্শিদাবাদের একাধিক জায়গায় খোলা হয় অভয়া ক্লিনিক। তার মধ্য়ে অন্য়তম জাফরাবাদ। যেখানে বাড়ি থেকে টেনে বার করে, কুপিয়ে-থেঁতলে খুন করা হয়েছিল বাবা ছেলেকে। সেই পরিবারের সদস্য়, নিহত হরগোবিন্দ দাসের মেয়ে শুক্রবার অভয়া ক্লিনিকে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। হিংসায় নিহত হরগোবিন্দ দাসের মেয়ে যুথিকা দাস বলেন,’আমার বাবা, ভাই ওরকম হয়েছে তার জন্য শরীর খারাপ করছে। কিছু বলতে পারছি না। ওইজন্য। ডাক্তার এসেছে, দেখিয়ে নাও। আমার বাবাকে যে খুন করেছে তাদের আমরা শাস্তি চাই।’
শুক্রবার সকালে সামশেরগঞ্জে পৌঁছন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের ৮ জন সদস্য। দাঙ্গা বিধ্বস্ত জাফরাবাদ ও বেতবোনায় অভয়া ক্লিনিক খোলেন তাঁরা। শুক্রবার সামশেরগঞ্জে দাঙ্গার পর, রবিবার বাংলার সীমানা পার করে ঝাড়খণ্ডে গিয়ে বাড়ির মহিলা সদস্যদেরকে রেখে এসেছিলেন রানিপুরের বাসিন্দা প্রদীপ্ত পাল। এদিন জাফরাবাদে অভয়া ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাতে আসেন তিনি। পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে এখনও যে ক্ষোভ জমে রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে, তা-ও বেরিয়ে আসে অভয়া ক্লিনিকে।
এত পুলিশে ফোন করছে। তাও পুলিশ আসেনি। কেউ আসেনি। ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট সদস্য আসফাকুল্লা নাইয়া বলেন, সব কথার সারাংশ করা যায় যেটা, সেটা হল একটা প্রশাসনিক ব্যর্থতা। পুরো ঘটনাটা সাম্প্রদায়িকতার মোড়কে প্রশাসনিক একটা ব্যর্থতা। শুধু জাফরাবাদেই নয়, এদিন সামশেরগঞ্জের বেতবোনাতেও অভয়া ক্লিনিক খোলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের সদস্য দেবাশিস হালদার বলেন, মানসিক ক্ষতি এখানে খুব বড় হয়েছে। এখন নয় প্রশাসন আছে, তখন তো কেউ ছিল না।
তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন,’অত্যন্ত নাটক করতে গেছে অভয়া ক্লিনিক।প্রতি পদক্ষেপে সরকার বিরোধী নাটক কুৎসা করতে গেছে সেটা প্রমাণিত। হিসেবে দিয়েছিল ঠিক হয়নি জবাব এড়াতে নাটক করতে গেছে। ‘শারীরিক অসুস্থতার নয় চিকিৎসা হল, কিন্তু দাঙ্গা বিধ্বস্ত মানুষগুলোর মানসিক পরিস্থিতি কি এত সহজে ঠিক হবে? আদৌ হবে কি? সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
আরও দেখুন