জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বিলম্বিত বোধদয়। তবে বিলম্বিত হলেও ভালো। সমাজের নারী পুরুষের সাম্য নিয়ে এত কথা বলা হলেও এই পুরুষশাসিত সমাজে, মেয়েদের এখনও পুরুষের কথা শুনে চলার ছবিটা খুব স্পষ্ট। আর চারিদিকে ঘটে চলা খুন ধর্ষণ আত্মহত্যা, নারী নির্যাতন- নারীর উপর পুরুষের অধিকার ফলানোরই নামান্তর। পুরুষ মানুষ রাগের মাথায় অনেক কিছুই করে থাকেন এবং যুগে যুগে সেই অন্যায় কাজগুলোকেই স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েছে এই সমাজ।
আরও পড়ুন- ‘বলিউডের পুরস্কার মঞ্চের ওই ‘অকেজো ট্রফি’র থেকে একটা শাড়ি উপহার হিসেবে বেশি প্রিয়…’
যেমন পুরুষ মানুষ সারাদিন পর মদ্যপান করে বাড়ি ফিরে, পছন্দের জিনিস না পেলে স্ত্রী বা অন্য কাউকে শারীরিক নির্যাতন বা ‘পেটানো’ যেমন ভারতবর্ষের খুব কমন একটা ছবি, তেমনই খবরের দৌলতে দেখা গিয়েছে চিকেন রান্না করতে পারেনি স্ত্রী, তাই গর্ভবতী স্ত্রীর হাত কেটে দিয়েছে স্বামী। আর গায়ে হাত তোলা, মানে চড় থাপ্পড় মারা তো রোজনামচা।
কিন্তু ‘থাপ্পড় মারা’ যে অন্যায়, রাগের বশবর্তী হয়ে একটি থাপ্পড়ও কাউকে মারা যায় না, মারা উচিত নয়, তা গর্হিত অপরাধ হিসেবেই গণ্য হবে, তা হাড়ে হাড়ে বুঝিয়েছে তাপসী পান্নু অভিনীত ছায়াছবি ‘থাপ্পড়’। এক গৃহবধূর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অভিনেত্রী তাপসী পান্নু। স্বামীর মনের মত হয়ে উঠতে পারেননি তিনি, তাই একদিন উচ্চপদস্থ স্বামী, আপাত-ভালো স্বামী, একটি থাপ্পড় মেরেছিলেন স্ত্রীর গালে। মাত্র ‘একটি’ থাপ্পড়। নিজের সারাদিনের জমে থাকা বিরক্তি উগড়ে দিয়েছিলেন স্ত্রীর উপর সেই একটি থাপ্পড়ে। এই থাপ্পড়ের শব্দ ও আঘাত খুব বেশি না হলেও তার গভীরতা ছিল অসীম। মনের যে গহীন ঘরে এই আঘাত অনুরণন ফেলেছিল তাঁর স্ত্রী তাপসী পান্নুর জীবনে, তার অভিঘাত তাঁদের সম্পর্কে বিচ্ছেদ টেনেছিল।
নিঃসন্দেহে এই ছবি সাড়া ফেলেছিল সমাজের সব স্তরে। পরিচালক ‘হনসল মেহতা’ এই ছবি দেখে অবাক এবং প্রভাবিত হয়েছিলেন ভীষণ। এই ছবি দেখার পর তিনি তাঁর প্রাক্তন স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। তাঁদের জীবনে এরকম কোনও ঘটনা ঘটেছে কিনা তা হয়তো তিনি স্পষ্ট করেননি কিন্তু সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারের মেহতা বলেছেন- ‘আমি হয়তো কখনওই আমার প্রাক্তন স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাইতাম না। কিন্তু এই ছবি দেখার পরে বিষয়টা বদলে যায়। থাপ্পড় খুবই গভীর বার্তা দেয়। ভাল ছবি এমনই হয়। এর ভালো প্রভাবই ছড়িয়ে যায় সব জায়গায়…’
আরও পড়ুন- ‘যৌনতার তীব্র খিদেতে ছটফট করতেন’… বিস্ফোরক সুপারস্টারের প্রাক্তন স্ত্রী
অনুভব সিং পরিচালিত ছবি নিয়ে হংসল মেহেতা আরও বলেছেন, ‘আমার জীবনের প্রত্যেক মহিলাকে একটাই কথা বলতে চাই। আমার স্ত্রী, আমার বোন, আমার কন্যারা, আমার প্রাক্তন স্ত্রী, আমার প্রেমিকাদের সবাইকে বলতে চাই আমি ক্ষমাপ্রার্থী। হয়তো দেরি করে ফেলেছি অনেকটা। তাও বলব আমি দুঃখিত। আমার পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব এবং স্বভাব তোমাদের উপর হয়তো কুপ্রভাব ফেলেছিল কোনও ভাবে। আমি নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করব। আমি নিজেকে একটা থাপ্পড় মারতে না পারলে, তোমরাই সপাটে একটা চড় মেরো আমাকে।’
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)