সন্দীপ সরকার, কলকাতা : কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের ডিসেম্বরের পরীক্ষায় ফেল করেছে দেশের ৯৩টি ওষুধ। এর মধ্যে রয়েছে বহুল ব্যবহৃত কিছু ওষুধ। আট থেকে আশির, রোজকার সঙ্গী এমন বহু ওষুধই লাল-কালির দাগ পেয়েছে কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের পরীক্ষার ফলে। তালিকায় রয়েছে, প্যারাসিটামল থেকে শুরু করে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক, প্রেশারের ওষুধ থেকে থাইরয়েডে নিয়মমিত থাওয়ার ওষুধও। নিউমোনিয়ার মতো কঠিন অসুখের ওষুধও ফেল-করা ওষুধের দলে। নার্ভ থেকে হার্টের অসুখের ওষুধ, কী নেই সেই তালিকায়! রয়েছে, শিশুদের জন্য ব্যবহৃত সর্দি কাশির সিরাপ, হৃদরোগে আক্রান্তদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার ওষুধ , ত্বকের ফাংগাল ইনফেকশনের ক্রিম, ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণের ওষুধ , লিভার ও খাদ্যনালীতে হওয়া আলসার উপশমের ওষুধ। এখানেই শেষ নয়। Central Drugs Standard Control Organisation (CDSCO) আরও ৫১ টি ওষুধের তালিকা প্রকাশ করেছে জানুয়ারিতে । এই ৫১ টি ওষুধের মধ্যে ২৪ টির নমুনা ফেল করেছে কলকাতার ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবে। এর মধ্যে রয়েছে বেঙ্গল কেমিক্যালের তৈরি একটি অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ইনজেকশনও। কলকাতায় যে ওষুধগুলো ফেল করেছে,তার মধ্যে রয়েছে ব্যথা কমানোর ওষুধ মেরোপেনাম, লিভারের অসুখের ওষুধ , স্ত্রীরোগে ব্যবহৃত হওয়া ওষুধ, ত্বকের অসুখে ব্যবহার হওয়া ওষুধ।
ফেল করা ওষুধগুলি কীসের
জানুয়ারি মাসে দেশজুড়ে বিভিন্ন রাজ্যে র্যানডম স্যাম্পল টেস্ট করে সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্য়ান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন। প্রত্যেক রাজ্যের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবে ওই পরীক্ষা হয়। সেই পরীক্ষাতেই গুণমানে ফেল করেছে ওষুধগুলি। ফেল-করা বিভিন্ন ব্যাচের ওষুধ এবং স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট গুলি তৈরি হয়েছে মূলত পশ্চিমবঙ্গের চোপড়া, হিমাচল প্রদেশের সোলান, বাদ্দি, কসউলি, কাংড়া, উত্তরাখণ্ডের রুরকি, দেরাদুন, পদুচেরি, তামিলনাড়ুর শ্রীনিবাসপুরম, চেন্নাই , হরিয়ানার যমুনানগর, গুজরাতের সুরেন্দ্রনগর, রাজকোট, মহারাষ্ট্রের পালঘর, জম্মু , মধ্যপ্রদেশের ইনদৌর, চিনের গুআংঝাউ, অন্ধ্রপ্রদেশের কুরনুল, মুম্বই , বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, পঞ্জাবের মোহালি, অমৃতসর , সিকিমের নামচি, তিরুঅনন্তপুরমের বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার কারখানায়। কোনও কোনও নমুনা স্টেরিলিটি পরীক্ষায় ফেল করেছে। কোনও কোনও নমুনাতে আবার মিলেছে ব্যাকটেরিয়া! এরাজ্যে ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবের পরীক্ষায় ফেল করেছে, দুটি বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার দুটি বহুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের ওষুধ। একটি হল, টেলমিসারটান, যা হার্টের সমস্যায় রোগীদের রোগীদের দেওয়া হয়। আরেকটি হল, অ্যামোক্সিসিলিন ও পটাশিয়াম ক্ল্যাভিউনেট।
ফেল করেছে রিঙ্গার ল্যাকটেট
উল্লেখ্য, জানুয়ারি মাসে দেশজুড়ে বিভিন্ন রাজ্যে র্যানডম স্যাম্পল টেস্ট করে এই তালিকা বের করেছে সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্য়ান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন। প্রত্যেক রাজ্যের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবে ওই পরীক্ষা হয়। কর্নাটকের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবে ফেল করেছে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার কারখানায় তৈরি পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালস সংস্থার ১৬টি ব্যাচের রিঙ্গার ল্যাকটেট এবং অন্য স্যালাইন। সম্প্রতি বিষাক্ত স্য়ালাইন ব্য়বহারের ফলে প্রসূতি মৃত্যুর ভয়ঙ্কর অভিযোগ ওঠে মেদিনীপুর মেডিক্য়াল কলেজে। ওই ঘটনায় নাম উঠে এসেছিল ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালস’-এর তৈরি রিঙ্গার ল্যাকটেটের, যাকে আগেই কালো তালিকাভুক্ত করেছিল কর্নাটক সরকার।
আর কী কা ওষুধ তালিকায়
খারাপ গুণমানের ওষুধের তালিকাভুক্ত আরও কয়েকটি ওষুধ হল, রিজেন্ট অজন্তা বায়োটেকের অ্যাসিক্লোফেনাক এবং ড্রোটাভেরিন হাইড্রোক্লোরাইড ট্যাবলেট (১০০ মিলিগ্রাম/৮০ মিলিগ্রাম), পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাস্যুক্যালসের কম্পাউন্ড সোডিয়াম ল্যাকটেট ইঞ্জেকশন আইপি ( রিঙ্গার্স ল্যাকটেট আইপি ), উইংস বায়োটেকের তৈরি প্যারাসিটামল, সেটিরিজিন হাইড্রোক্লোরাইড এবং ফেনাইলেফ্রিন হাইড্রোক্লোরাইড ট্যাবলেট (উইনকোল্ডজেড), জ্যাকসন ল্যাবরেটরিজের বিটাহিস্টিন ডাইহাইড্রোক্লোরাইড ট্যাবলেট আইপি ( বেটাহক্স৮ ) সহ আরও ওষুধ।
আরও দেখুন
+ There are no comments
Add yours