কলকাতা : বাংলাদেশের ক্রমাগত সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচার চলছে। কার্যত আতঙ্কের প্রহর কাটাচ্ছে তারা। ওপার বাংলার সেইসব ঘটনা লাগাতার তুলে ধরা হচ্ছে এবিপি আনন্দর পর্দায়। ‘ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন’-এর একাধিক পর্বে এই প্রেক্ষাপটে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সেখানকার পরিষ্কার চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে দর্শকদের সামনে। এবিপি আনন্দর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ‘ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন’-এর সঞ্চালক সুমন দে-র তত্ত্বাবধানে আয়োজিত সেইসব অনুষ্ঠানের দিকে নজর রাখছেন গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা দর্শকরা। এই পরিস্থিতিতেই এবার বাংলাদেশের অন্যতম ক্ষমতাশালী দল বিএনপি-র রোষের মুখে পড়লেন সুমন দে। ‘কত টাকা পেয়েছেন সুমন দে বাবুরা ?’ বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগের ধরে ধরে জবাব দিলেন এবিপি আনন্দের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট।
সম্প্রতি BNP নেতা রুহুল কবীর রিজভি সাংবাদিক মুখোমুখি হয়ে বলেন, “আপনাদের মিডিয়া কে একজন সুমন (পড়ুন এবিপি আনন্দের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুমন দে), এক ভদ্রলোক অহর্নিশি ক্রমাগতভাবে তিনি মিথ্যে অপ্রচার করে যাচ্ছেন। আমি তাঁকে একটু ভদ্রলোক বলেই মনে করতাম। দেখতে শুনতেও সুন্দর। কিন্তু, মনটা এত অসুন্দর। বাংলাদেশের গোপালগঞ্জে একটা পরিবারে আগুন লাগিয়ে ৫ জন পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। ওইটা তিনি ফলাও করে প্রচার করছেন। আজকে খেয়ে না খেয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপ্রচার করছেন। ওখানে যারা সত্যিকারের প্রগতিশীল আর সাম্প্রদায়িক…তারা এই সমস্ত মিডিয়াকে বলে কী যেন ? গদি মিডিয়া । এক একটা বয়ান, একটা ন্যারেটিভ তৈরি করছেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। কারণ, শেখ হাসিনার পতনটা একেবারেই মেনে নিতে পারছেন না। ২৮ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়েছে শেখ হাসিনার আমলে। তাহলে এই কোটি টাকা কি…এই ২৮ লক্ষ কোটি টাকার কত টাকা পেয়েছেন সুমন দে বাবুরা ? এটাও আপনারা বলুন নাহলে কেউ কিন্তু বলে দেবে।”
যে অভিযোগের জবাবে সুমন দে বলেন, “দেখুন রুহুল সাহেব আপনি আমাকে ভদ্রলোক বলে মনে করেন। আমিও আপনাকে ভদ্রলোক বলেই তার উত্তরগুলো দেব। আপনি বলেছেন শুনছিলাম, দেখতে শুনতে সুন্দর। আপনিও অত্যন্ত সৌম্যদর্শন পুরুষ। ভারতের মিডিয়া নিয়ে একটা সার্বিক ছবি আঁকার চেষ্টা করেছেন। একটা অবশ্য সামান্য আমার…ক্ষমা করে দেবেন আমি বয়সে আপনার থেকে ছোটই হব, অহর্নিশিটা কিন্তু অশুদ্ধ প্রয়োগ। বাংলায় আসল শব্দটা ‘অহর্নিশ’। আপনি নিশ্চয়ই দেখে নেবেন ভবিষ্যতে। আবার বলছি, আমি ভদ্রলোক হিসাবে আপনার জবাবটা ফেরত দেব। প্রথম কথা, আপনি এত সহজে এবিপি আনন্দকে হাসিনাপন্থী বলে দাগিয়ে দিতে পারবেন না। রুহুল সাহেব আপনাকে আমি মনে করিয়ে দেব, আওয়ামি লিগের নির্বাচনের সময় প্রহসন হয়েছে, ভারতীয় মিডিয়ার মধ্যে সম্ভবত একমাত্র এবিপি আনন্দে আমরা পরিষ্কার বলি যে, গণতন্ত্রের কোথাও কণ্ঠরোধ হচ্ছে। আদর্শ নির্বাচনের এটা ছবি নয়। কোন সময় ? যখন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান। যখন আপনারা বিরোধী দল…তখন আপনারা কী ভাবছেন, শেখ হাসিনা কী ভাবছেন…আমরা ভাবিনি। আমাদের প্রতিনিধি একাধিক নির্বাচনে বৈধ পাসপোর্ট নিয়ে সেটা কভার করতে গেছেন। সেই ছবি দেখে আমাদের মনে হয়েছে, এটা গণতান্ত্রিক দেশের একটা নির্বাচনের আদর্শ ছবি নয়। আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি। পৃথিবীজোড়া এবিপি আনন্দের দর্শকদের সামনে তুলে ধরেছি যে, হাসিনা-বিরোধী আন্দোলন চলছিল যখন, তার একেবারে সত্যিকারের ছবি। যখন সেই আন্দোলন চলছে, আরও একবার দর্শকদের মনে করিয়ে দিয়েছি, এই অনুষ্ঠানে আমার সহকর্মী কৃষ্ণেন্দু অধিকারীকে এনে( যিনি বাংলাদেশের নির্বাচনটা কভার করেছেন)…নিজে মুখে তিনি কী বলছেন। বাংলাদেশে নির্বাচন হয়েছে, নাকি নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। আই রিপিট রুহুল সাহেব, সম্ভবত একমাত্র ভারতীয় চ্যানেল যারা এই ছবিটা তুলে ধরার সাহস দেখিয়েছে।”
আমরা সবসময়ই গণতন্ত্রের পক্ষে, মানবাধিকারের পক্ষে।
গত জুলাই-অগাস্ট মাসে বাংলাদেশের রাজপথে যখন প্রতিবাদী ছাত্রদের গুলি করে মারা হচ্ছিল, তখনও আমরা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষ নিয়েছিলাম। আর এবার যখন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে সেদেশে কট্টরপন্থী… pic.twitter.com/0POSWn8IlQ
— Sange Suman (@IamSumanDe) December 4, 2024
তাঁর আরও জবাব, “রুহুল সাহেব আপনি তো বিএনপি দলেরই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। আপনি শুনলেন (উপরের ক্লিপিংয়ে এবিপি আনন্দর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ‘ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন’-এর সঞ্চালক সুমন দে-র সঙ্গে এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি কৃষ্ণেন্দু অধিকারীর কথোপকথন রয়েছে) ? আর একবার কি চালাব ? একেবারে পরিষ্কার ওইখানে, ওই মাটিতে ওই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আমরা প্রতিবাদ করলাম, যেভাবে বিএনপি নেতাদের, আপনার দলের নেতাদের জেলে রাখা হচ্ছে এবং সেই জেলে তাঁদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না। আজ ঠিক চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের সঙ্গে যেটা হচ্ছে, ঠিক সেইটা যখন আপনাদের দলের নেতাদের সঙ্গে হয়েছে সেটাও এই ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। এখানেই শেষ নয়। এরপর যখন ছাত্র আন্দোলন হচ্ছে। উত্তাল বাংলাদেশ, রাজপথে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ, আমরা বারবার বলেছি…বাংলাদেশের সরকার, বাংলাদেশের শাসক দল এবং আওয়ামি লিগের স্টুডেন্টস উইং ছাত্র লিগ..তারা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে দিনের পর দিন অত্যাচার চালাচ্ছে…ভাঙচুর চালাচ্ছে…গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরছে…রুহুল সাহেব মনে রাখবেন সামনভাবে এই পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে দাঁড়িয়ে আমরা তার প্রতিবাদ করেছি। এই এবিপি আনন্দ করেছে। এই সুমন দে, যাকে আজকে আপনি নাম করে আক্রমণ করেছেন, তিনিও করেছেন। আমার সমস্ত প্যানেলিস্টের কাছে আমি কৃতজ্ঞ তাঁরাও বলেছেন। একেবারে গলা খুলে বলেছেন। মানবাধিকার আর গণতন্ত্র যেখানে আক্রান্ত হবে, সেখানে এবিপি আনন্দ রুখে দাঁড়াবে। তারা সরব হবে। সেটা যদি বাংলাদেশে হয় সেখানে, সেটা যদি ভারতে হয় সেখানে, সেটা যদি পশ্চিমবঙ্গে হয় সেখানেও। আমরা শাসকের পতাকার রং দেখে সরবতা ঠিক করি না।
সুমন দে-র সংযোজন, “আমাদের এই চ্যানালের ট্যাগ লাইন…সীমানা। যেখানে গণতন্ত্র-মানবাধিকার আক্রান্ত হয়, আমরা সীমা দেখি না। আমরা সমালোচনা করি। ক্ষমতায় কে আছেন, আর বিরোধী চেয়ারে কে বসছেন আমরা দেখি না। দেশের মধ্যেও দেখি না, দেশের বাইরে তো দেখিই না। আপনি নাম করে বলেছেন বলে, আর একটা সমালোচনার জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে হচ্ছে। গোপালগঞ্জ। গোপালগঞ্জ নিয়ে কী বলেছি ? গোপালগঞ্জ শব্দটিই উচ্চারিত হয়নি এই অনুষ্ঠানে আমার মুখে। একটা ভিডিও পোস্ট করেছিলেন কলকাতার ISKCON-এর প্রধান রাধারমণ দাস। তিনি পরিষ্কার, আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম… লোকেশন বলিনি তার ২টো কারণ, আমরা জানতাম না লোকেশন ও আমরা নিশ্চিত ছিলাম না। আমরা সনাতনী সাংবাদিকতাতেও বিশ্বাস করি। নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা। আমরা নিজেরা কনফার্ম না হয়ে খবর দিই না। রুহুল সাহেব, আপনি হিন্দুত্বের সঙ্গে সাম্প্রদায়িকভাবে যোগ করার চেষ্টা করলেন। কোথাও শুনলেন ? হ্যাঁ রুহুল সাহেব, আমি ব্যক্তিগত বিশ্বাসে আস্তিক। মন্দিরে যাওয়া গর্বিত হিন্দু। মঠ-মিশনে যাওয়া গর্বিত হিন্দু। কিন্তু, পাশাপাশি আমি আপনার ধর্ম ইসলাম ধর্মের প্রতিও সমান শ্রদ্ধাশীল। আমি বৌদ্ধ-খ্রিশ্চান ধর্মের প্রতিও সমান শ্রদ্ধাশীল। আমরা পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামকৃষ্ণের মাটির বাসিন্দা। আমাদের এইভাবে কোনও একটা গণ্ডির মধ্যে আপনি বাঁধতে পারবেন না। ঠিক যেমনভাবে আমরা আরজি করে বোনটার জন্য সরব হই, ঠিক তেমনভাবে রিজওয়ানুরকাণ্ডেও সরব হই। ওখানে কোনও ধর্ম-কোনও ভেদাভেদ দেখি না। এই ট্যাগটা আপনি এবিপি আনন্দের গায়ে লাগাতে পারবেন না।”
আরও দেখুন