NOW READING:
৩.৫ বছর ধরে বন্ধ ১০০ দিনের কাজের টাকা, কেন্দ্রকে কড়া নির্দেশ হাইকোর্টের, কিন্তু জট কাটবে কি?
June 18, 2025

৩.৫ বছর ধরে বন্ধ ১০০ দিনের কাজের টাকা, কেন্দ্রকে কড়া নির্দেশ হাইকোর্টের, কিন্তু জট কাটবে কি?

৩.৫ বছর ধরে বন্ধ ১০০ দিনের কাজের টাকা, কেন্দ্রকে কড়া নির্দেশ হাইকোর্টের, কিন্তু জট কাটবে কি?
Listen to this article


কলকাতা: রাজনৈতিক টানাপোড়েনে খেটে খাওয়া মানুষের টাকা বন্ধ থাকবে কেন, বার বার উঠেছে সেই প্রশ্ন। কিন্তু ১০০ দিনের কাজে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বরাদ্দ টাকা ঢোকেনি রাজ্যের তহবিলে। সেই নিয়ে কাটাছেঁড়ার মধ্যেই বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। বলা হয়েছে, দুর্নীতির তদন্ত থাকলেই কোনও প্রকল্পকে অনন্তকাল ধরে ঠান্ডা ঘরে ফেলে রাখা যায় না। দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে তদন্ত হোক। কিন্তু প্রকল্প চালু রাখতে হবে। আগামী ১ অগাস্ট থেকে পশ্চিমবঙ্গে ফের ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প চালু করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। (100 Days Work)

তৃণমূলের অভিযোগ, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে রাজ্যের জন্য বরাদ্দ ১০০ দিনের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। সেই বাবদ প্রায় ৭০০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে রাজ্যের। পর পর নির্বাচনে তৃণমূলের কাছে পরাজিত হওয়ায়, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রাখা হয়েছে বলে লাগাতার অভিযোগ করে আসছে তৃণমূল। রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত রাজ্যের মানুষকে বঞ্চনা করা হচ্ছে বলেও দাবি তাদের। তাই এদিন আদালতের নির্দেশ আসার পরই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তৃণমূল। (MGNREGA in West Bengal)

এদিন সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “কেন্দ্রের বৈষম্য ছিল। ১০০ দিনের টাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। গরিব মানুষকে কাজ করিয়ে টাকা দেওয়া হয়নি। ৫৯ লক্ষ জব কার্ড হোল্ডারকে ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় রাজ্যের নিজস্ব তহবিল থেকে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার যে বেআইনি ভাবে, বৈষম্যমূলক ভাবে, প্রতিহিংসা পরায়ণতা থেকে বাংলার টাকা আটকে রেখেছিল, আদালতের রায়ে তা প্রমাণিত হল। রায়ে আর কী কী রয়েছে, কী শর্ত, কী নির্দেশ, তা খতিয়ে দেখে রাজ্য বিশদ জানাবে। আমরা শুধু একটাই কথা বলব, দেশের আর কোথাও যেন এই বৈষম্য না হয়। তুমি দুর্নীতি বলে বাংলার দিকে আঙুল তুলছো, আর গুজরাতে তোমার ডাবল ইঞ্জিন সরকারে মন্ত্রীর ছেলেরা ১০০ দিনের কাজে চূড়ান্ত দুর্নীতি করে গ্রেফতার হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশ ভুয়ো জব কার্ডের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। সেখান থেকে বাংলার প্রতি ইঙ্গিতপূর্ণ কথাবার্তা, দুর্নীতি হয়, নজরদারি চাই, নিয়ম করতে হবে…বাকি জায়গায় লুঠ করে ফাঁক করে দিচ্ছে, অথচ সেখানে টাকা যাচ্ছে। এটা চলতে পারে না। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি যে রায় দিয়েছেন, তা আমাদের দাবি ও আন্দোলনের জয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায় বাংলার প্রতি বঞ্চনার বিরুদ্ধে যে আন্দোলন করছেন, তার একটা অংশ অন্তত মান্যতা পেল।” 

প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীও এদিন নিজের মতামত জানান। তিনি বলেন, “দেশের প্রত্যেক রাজ্য, প্রত্যেক জেলায় ১০০ দিনের কাজ চালু রয়েছে। ১০০ দিনের কাজের আরও একটা বড় দিক হল, যত টাকা দরকার, তত টাকার কাজ হবে। একমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই ১০০ দিনের কাজ বন্ধ রয়েছে দুর্নীতি, চুরি-বাটপারির কারণে। চুরি যারা করেছে, তারা চোর। কিন্তু সাধারণ মানুষ যাঁরা কাজের বিনিময়ে অর্থ রোজগার করেন, তাঁদের জন্য এই কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া দুর্বিসহ। তাঁদের অভাব বেড়ে যাচ্ছে,দারিদ্রতা বাড়ছে। আদালত যে রায় দিয়েছে, তা পশ্চিমবঙ্গের দরিদ্র মানুষের অন্ন জোগানোর জন্য করেছে।”

সিপিএম-এর সুজন চক্রবর্তী বলেন, “কেন্দ্র এবং রাজ্য দু’জন ঝগড়া করবে, একজন টাকার হিসেব দেবে না, একজন টাকা দিতে চাইবে না, না কেন্দ্র না রাজ্য, কেউ শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে না, রাজায় রাজায় যুদ্ধ করবে, আর গ্রামের গরিব মানুষ,উলুখাগড়ার প্রাণ যাবে, এটা হয়? আমরা অনেক বার বলেছিলাম, প্রকল্প চালু করতে হবে। সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে মানুষকে বিপদে ফেলা যাবে না, রাজ্যই হোক বা কেন্দ্র। সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলা যাবে না।”

১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রাখার প্রসঙ্গ এর আগে সংসদেও উঠেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।  কেন্দ্রকে শ্বেতপত্র প্রকাশের চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেন তিনি। চলতি বছরের মার্চ মাসে সংসদের বাইরেও বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল সাংসদরা। যদিও এই গোটা পর্বে রাজ্য বিজেপি-র নেতৃত্ব জানান, তৃণমূল সরকার টাকা নয়ছয় করছে বলেই টাকা দিতে পারছে না কেন্দ্র। সেই নিয়ে তিনি নিজে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান শুভেন্দু অধিকারী। ১০০ দিনের কাজের টাকা তছরুপ হচ্ছে বলে, CBI তদন্ত চেয়ে আদালতেও গিয়েছিলেন তিনি।  শুধু তাই নয়, রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে বলতে শোনা যায়, “সুকান্ত মজুমদার একটা ফোন করলেই সব টাকা চলে আসবে।” সেই নিয়ে তরজার মধ্যে ১০০ দিনের কাজ করে যাঁরা টাকা পাননি, তাঁদের অ্যাকাউন্টে নিজস্ব তহবিল থেকে টাকা পাঠাতে শুরু করে মমতা সরকার। ১০০ দিনের কাজ কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ায়, রাজ্যের তরফে ৪০ দিনের কাজের প্রকল্প শুরু করা হয়। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রাজ্য সরকার নিজের তহবিল থেকে শ্রমিকদের প্রাপ্য প্রায় ৪০০০ কোটি টাকা মিটিয়েছে বলে জানা যায়।

তবে এদিনের এই রায়ের পরও নিজের অবস্থানে অনড় বিজেপি। দলের  মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “তৃণমূলের দাবিকে মান্য়তা দেয়নি আদালত। কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের টাকা পাঠাতে চায়। রাজ্যের প্রান্তিক মানুষকে বঞ্চিত করার কোনও ইচ্ছে নরেন্দ্র মোদি সরকার এবং শাসক দল বিজেপি-র নেই। আমরাও চাই প্রকল্প শুরু হোক। কিন্তু হচ্ছে না তৃণমূলের সীমাহীন লোভ ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কারণে। কেন্দ্রকেও কারও কাছে জবাব দিতে হয়, CAG-কে তথ্য় দিতে হয়। ওঁরা যখন স্বীকার করছেন দুর্নীতি হয়েছে, তাহলে যারা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিন, টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা করুন।  তা কি করেছে? আজ যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, আজও জটিলতা রয়েছে। এই রায় পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে, তার জন্য দায়ী হচ্ছে তৃণমূল।”



Source link