সোমশুভ্র মুখোপাধ্যায়

 

এত বেশি কথা বলো কেন? চুপ করো
শব্দহীন হও
শষ্পমূলে ঘিরে রাখো আদরের সম্পূর্ণ মর্মর

এই কোলাহলে, উদ্দামতায়, প্রতি মুহূর্তের অনর্গল কথার ভিড়ে এভাবেই বারবার আমাদের সতর্ক করে দিয়েছেন কবি শঙ্খ ঘোষ। তাঁর কবিতা অনন্ত প্রবাহের মাঝে আশ্চর্য এক যতিচিহ্ণের মতো স্থির দাঁড়িয়ে থাকে। অবিচল। সময় গড়িয়ে যায়, শঙ্খ ঘোষের কবিতাও সময়ের অলিগলিতে ঘুরতে ঘুরতে ঝরণার মতো ঝরতে থাকে।
আমারই হাতে এত দিয়েছ সম্ভার
জীর্ণ করে ওকে কোথায় নেবে?
ধ্বংস করে দাও আমাকে ঈশ্বর
আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক।
বাবা-মায়ের এই আকুল প্রার্থনা কবির লেখায় মায়াময় এক ভূবনের স্বপ্ন এঁকে দেয়। আমাদের অনন্ত আশ্রয়ের আধার হয়ে ওঠে।  
দীর্ঘ পরিক্রমার পরেও কবি লিখতে পারেন
মাটিতে বসানো জালা, ঠান্ডা বুক ভরে আছে জলে
এখনও বুঝিনি ভাল, কাকে ঠিক ভালবাসা বলে

বিস্ময়ের ঘোর নিয়ে পাঠক অপেক্ষা করে আরও এক বাঁক বদলের।

নিষ্ঠুরতাও তো তাঁর অচেনা নয়! নানা ঝঞ্ঝা তাঁকে ক্ষতবিক্ষত করেছে বারবার। কবি প্রত্যাঘাত করেননি। শুধু কবিতার কাছে নতজানু হয়ে মৃদু অভিমান
এত যদি ব্যূহ চক্র তীর তীরন্দাজ, তবে কেন
শরীর দিয়েছ শুধু, বর্মখানি ভুলে গেছ দিতে !
কবিতা তাঁর সমগ্র জীবনের ভরকেন্দ্র।তাই অনায়াসে বলতে পারেন
মদ খেয়ে তো মাতাল হত সবাই
কবিই শুধু নিজের জোরে মাতাল !

বাবরের প্রার্থনা, মূর্খ বড়ো সামাজিক নয়, ধূম লেগেছে হৃত্‍কমলে, আরুনি উদ্দালক, শূন্যের ভিতরে ঢেউ, গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ- আরও অনেক। সব কবিতার বই জড়ো করলে এই কবির সঙ্গে এক অনন্য যাত্রার শরিক হয়ে ওঠে পাঠক। এক অন্তহীন বিস্ময় নিয়ে কবি দাঁড়িয়ে থাকেন দীর্ঘ এক জিজ্ঞাসার মতো।
তাঁর কবিতার মতো গদ্যও নির্ভার, সাবলীল। আর তাঁর রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে রচনাগুলি এককথায় অমূল্য।
শঙ্খ ঘোষ। এক অসামান্য শক্তিধর কবি। অনিন্দ্যসুন্দর গদ্যকার। অন্যতম শ্রেষ্ঠ রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ। তাঁর কাজের স্বীকৃতি পেয়েছেন বহুভাবে। সাহিত্য অক্যাডেমি, পদ্যভূষণ। এবার জ্ঞানপীঠ। বাংলা সাহিত্যের আজ বড় গর্বের দিন।

আরও পড়ুন সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারে সম্মানিত নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি





Source link

Shares:
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *