একদিন বয়সেই মাতৃহারা দুধের শিশু ! মেদিনীপুর মেডিক্যালের ঘটনায় দায়ী কে ?
<p><strong>সৌমেন চক্রবর্তী, সোমনাথ দাস ও সন্দীপ সরকার, কলকাতা :</strong> মেদিনীপুর মেডিক্যালে এক প্রসূতির মৃত্যু এবং আরও চার প্রসূতির গুরুতর অসুস্থ হওয়া নিয়ে বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। অভিযোগ, যে স্যালাইন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল স্বাস্থ্য দফতর, সেই স্যালাইন প্রয়োগের পরই, প্রসূতির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সন্তান জন্ম দেওয়ার পরের দিনই মৃত্যু হয় তাঁর। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেই যে মৃত্য়ু, সূত্রের খবর, মেদিনীপুর মেডিক্যালের রিপোর্টেও তার উল্লেখ রয়েছে। আগামীকাল মেদিনীপুর যাচ্ছে চিকিৎসকদের ১০ সদস্য়ের টিম। </p>
<p>বুধবার রাতে মাতৃত্বের স্বাদ পেয়েছিলেন। আনন্দে ভরে উঠেছিল গোটা পরিবার ! কিন্তু, কেউ ভাবতেও পারেননি, মাত্র একদিন পরই সদ্যোজাতকে ছে়ড়ে এভাবে চলে যেতে হবে মাকে ! অভিযোগ, স্যালাইন থেকে সংক্রমণের কারণেই, প্রসবের পরদিনই মৃত্যু হল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি থাকা প্রসূতির। একদিন বয়সে মাতৃহারা হল দুধের শিশু। </p>
<p>পরিবার সূত্রে খবর, বুধবার রাতে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে, সুস্থ সন্তানের জন্ম দেন চন্দ্রকোণার বাসিন্দা মামণি রুইদাস। পরিবারের অভিযোগ, স্যালাইন দেওয়ার পরই প্রসূতির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যু হয়। মৃত প্রসূতির আত্মীয় গৌতম দাস বলেন, "মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইনের জন্য় মারা গেছে। অপারেশনটা হয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের। পুরো চিকিৎসাই ভুল চিকিৎসা হয়েছে এবং যদি এরা না পারত ওঁকে রেফার দেওয়া হল না কেন? রেফারটা দিলে তো আমরা অন্য় কোথাও যেতাম। স্যালাইনটা পুরো ডেট ফেল স্য়ালাইন ছিল।"</p>
<p>এই মারাত্মক অভিযোগ প্রসঙ্গে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের তরফে স্বাস্থ্য় দফতরে যে রিপোর্ট, দেওয়া হয়েছে তা রীতিমতো চাঞ্চল্য়কর ! সূত্রের দাবি, রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল’ নামে ওই কোম্পানির স্যালাইন ব্য়বহারের ফলেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় প্রসূতির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। প্রসূতিদের রক্তক্ষরণ বন্ধে ব্য়বহার করা হয় ‘রিঙ্গার ল্যাকটেট স্যালাইন’। সেই ‘রিঙ্গার ল্যাকটেট স্যালাইনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জেরেই মৃত্যু হয়েছে প্রসূতির। </p>
<p>এ প্রসঙ্গে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "রিঙ্গার ল্যাকটেট দেওয়া হয় ব্লাডটা লসটাকে রিপ্লেনিশ করার জন্য। বড় সার্জারির পরে একটু মেটাবলিক অ্যাসিডোসিস হয়। ওটা প্রয়োজনীয়। আমাদের দিতেই হবে ফ্লুইড।" </p>
<p>যাদের জন্য় শিশুটি মাতৃহারা হল… মা কী জিনিস বুঝল না… মমত্বহীন হল… তার দায় নেবে কে ? মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মৌসুমী নন্দী বলেন, "এটার তদন্ত চলছে। এক রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। আর বাকিদের চিকিৎসা চলছে।" তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় কী কারণে মৃত্যু কিছু কি বোঝা গেল ? এর উত্তরে অধ্যক্ষ বলেন, "বিষয়টি তদন্তাধীন।" বাকি অসুস্থ প্রসূতিরা কেমন আছেন, তা সন্তর্পণে এড়িয়ে গেলেন অধ্যক্ষ।</p>
<p>সূত্রের খবর, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি থাকা আরও ৪ প্রসূতিও অসুস্থ। তাঁদের মধ্য়ে ২ জনের অবস্থা বেশ গুরুতর। </p>
<p>গত বছর নভেম্বর মাসে এই ওষুধের ব্য়বহারের ফলে প্রসূতিদের মৃত্য়ুর অভিযোগ ওঠার পর, চোপড়ায় সংস্থার অফিসে হানা দিয়েছিল কর্নাটকের স্বাস্থ্য় দফতর। এরপর ৭ জানুয়ারি এই ওষুধ ব্য়বহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাজ্য় স্বাস্থ্য় দফতর। কিন্তু চিকিৎসকদের প্রশ্ন, তারপরও কী করে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে এক প্রসূতিকে এই ওষুধ দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠতে পারে ?</p>
<p>চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "এই রকম রিঙ্গার ল্য়াক<a title="টেট" href="https://bengali.abplive.com/topic/tet" data-type="interlinkingkeywords">টেট</a> ব্য়বহার করার জন্য় প্রসূতির অসুস্থতা বেড়েছে। তাঁদের মৃত্য়ু হয়েছে। এই অভিযোগ এসেছে। এই একই রকম অভিযোগ ভিনরাজ্য়েও একটা ঘটেছে। এখানকার এই ঘটনা নিয়ে। এটা আমাদের লজ্জার এবং এই অভিযোগগুলি এক বছর ধরে হওয়া সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত আমাদের রাজ্য়ের স্বাস্থ্য় দফতর বা যাঁরা এগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করেন, তাঁদের দিক থেকে কোনও সদর্থক ভূমিকা আমরা এখনও দেখতে পেলাম না। সেজন্য় একটার পর একটা ঘটনা ঘটছে। আমাদের সহ নাগরিকদের মৃত্য়ু মিছিল বাড়ছে। এই রকম নিম্নমানের ওষুধের জন্য়।"</p>
<p>ছোট্ট শিশুকে মা হারা অবস্থায় গোটা জীবন কাটাতে হবে ! তার দায় কি কেউ নেবে ?</p>
Source link