কলকাতা : থেমে গেল প্রতিবাদী কণ্ঠ ! এক মাসের বেশি সময় ধরে বারাণসীর হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন। এদিন সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্ত (Former IG of West Bengal Police Pankaj Dutta)। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ শোকস্তব্ধ। বরাবর অন্যায়ের প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে তাঁর কণ্ঠস্বর। রাজ্যের বিভিন্ন ইস্যুতে কোনও গাফিলতি দেখলেই সরব হয়েছেন। এবিপি আনন্দর ‘ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন’-শোয়ের একের পর এক পর্বে তাঁর প্রতিবাদী কণ্ঠ রাজ্যজুড়ে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। চাঁচাছোলা ভাষায় শাসকের ত্রুটি ধরিয়ে দিতে কখনো পিছপা হননি রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন এই কর্তা। আঙুল তুলে দেখিয়ে দিয়েছেন অন্যদের ত্রুটিও। সেই কণ্ঠস্বর আর শোনা যাবে না। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন এবিপি আনন্দ-র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুমন দে (ABP Ananda Senior Vice President Suman De)।
পঙ্কজ দত্তর নির্ভীক চরিত্র, সততাকে কুর্নিশ জানিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে এবিপি আনন্দ-র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, “সুমনবাবু, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি…” ঠিক দু’হাত দূরে লাল চেয়ারে বসা ভদ্রলোক আর কখনও গর্জে উঠবেন না। পঙ্কজ দত্ত চলে গেছেন।
পঙ্কজ দত্ত।
আপাত ক্ষীণকায়, শীর্ণ শরীর, লোলচর্ম এক বৃদ্ধ। হাতে বাজারের থলি আর ফতুয়া পরিয়ে দিলে গড়পড়তা আমবাঙালির সঙ্গে খুব তফাত থাকার কথা ছিল না।
তবুও এক সমুদ্রসমান তফাত ছিল।
আম বাঙালির সঙ্গে , এমনকী অনেক পুলিশকর্তার সঙ্গেই পঙ্কজদার তফাত ছিল দৃষ্টি আর কণ্ঠে।
কণ্ঠস্বরে নয় সততার উচ্চারণে।
আজকের ভীত, সাবধানি, সদাসতর্ক বঙ্গসন্তানদের মধ্যে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ছিলেন পঙ্কজ দত্ত। যা দেখতেন, তাই বলতেন। যা ভাবতেন, তাই বলতেন। যা বিশ্বাস করতেন, তাই বলতেন।
কী লিখলাম এক্ষুনি?
বিশ্বাস?
এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না, লিখতে হচ্ছে — পঙ্কজদা আর নেই।
আর যখন ছিলেন, দিনের পর দিন, পদে পদে কী সহ্য করতে হয়েছে?
তার হিসেব হবে না?
হবে। বলতে হবে।
তার আগে পেশাদার সাংবাদিককেও যন্ত্রণা আর আবেগের লাভাস্রোতকে সামাল দিতে হবে।
পঙ্কজদা, এই অন্ধকার সময়ে আপনাকে যে আরও বেশি করে প্রয়োজন ছিল!
বিজ্ঞাপনের বিরতিতে উঠে যাচ্ছেন পঙ্কজদা, দ্রুত পায়ে সঞ্চালকের পেছনে এসে যেন আলতো করে কাঁধে হাত রাখলেন,যেমন রাখতেন রোজ। নিচু গলায় বলছেন, এখনও স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি —
“চালিয়ে যান সুমনবাবু… “
চালিয়ে যাচ্ছি পঙ্কজদা।
চালিয়ে যাবও।
শুধু পাশের চেয়ারটাতে আর আপনাকে পাব না!
“সুমনবাবু, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি…”
ঠিক দু’হাত দূরে লাল চেয়ারে বসা ভদ্রলোক আর কখনও গর্জে উঠবেন না।
পঙ্কজ দত্ত চলে গেছেন।পঙ্কজ দত্ত।
আপাত ক্ষীণকায়, শীর্ণ শরীর, লোলচর্ম এক বৃদ্ধ। হাতে বাজারের থলি আর ফতুয়া পরিয়ে দিলে গড়পড়তা আমবাঙালির সঙ্গে খুব তফাত থাকার কথা ছিল না।… pic.twitter.com/jrI15bNeom
— Sange Suman (@IamSumanDe) November 30, 2024
গত ২৩ অক্টোবর বারাণসীর থিওজফিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন পঙ্কজ দত্ত । নাক-মুখ দিয়ে শুরু হয় রক্তক্ষরণ। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছিল হাসপাতালে। শুরু হয় চিকিৎসা। অস্ত্রোপচারও করা হয়েছিল। তারপর দীর্ঘদিন সেখানেই চিকিৎসা চলছিল প্রাক্তন IPS অফিসার পঙ্কজ দত্তর। এদিন সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
আরও দেখুন