আজ থেকে শুরু, মহাকুম্ভকে ঘিরে মায়ানগরীতে পরিণত প্রয়াগ; ‘পুণ্য-ধনের’ খোঁজে মিনি ভারত গঙ্গাসাগর

বিজেন্দ্র সিংহ, হিন্দোল দে, প্রয়াগ ও গঙ্গাসাগর : প্রয়াগে আজ থেকে শুরু মহাকুম্ভ। মকর সংক্রান্তির শাহি স্নানের আগে সঙ্গম তটে সাজসাজ রব। সংক্রান্তির আগে সেজে উঠেছে গঙ্গাসাগরও। ডুব-সাগরে পুণ্য-ধন খুঁজতে এসেই চলেছে কাতারে কাতারে মানুষ।
সঙ্গমতট প্রয়াগ। আর প্রান্তিক দ্বীপ গঙ্গাসাগর। মকর সংক্রান্তির শাহি স্নানের আগে সেজে উঠেছে দেশের দুই প্রান্তের দুই পুণ্যতীর্থ। প্রয়াগ-গঙ্গাসাগর। শুধুমাত্র স্নানকে ঘিরে কোটি কোটি মানুষের এই আবেগ এক আশ্চর্য বিস্ময়…। ডুবকি দিয়ে পুণ্য অর্জনের আশায় কত মানুষের কত পথ পাড়ি দিয়ে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসা… যা মনে করিয়ে দেয় কালজয়ী বাংলা সাহিত্য ‘অমৃতকুম্ভের সন্ধানে’র শেষে সাহিত্যিক সমরেশ বসুর লেখা সেই আত্মসমীক্ষাকে, ‘সত্য, আমি ভগবান পেতে ছুটে আসিনি। ডুব দিতে এসেছিলাম লক্ষ হৃদি সায়রে।’
পায়ের তলায় সর্ষে নিয়ে কুম্ভের টানে প্রয়াগে হাজির বাঙালি পর্যটকরাও। সোমবার থেকে শুরু হওয়া মহাকুম্ভ চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ৬টি পুণ্যস্নানের মধ্যে রয়েছে ৩টি শাহি স্নান। বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ…। ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজের তকমা পাওয়া কুম্ভমেলাকে ঘিরে সাজসাজ রব…। প্রয়াগে গঙ্গা, যমুনা আর সরস্বতীর সঙ্গমতটে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিকে ২৪টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। প্রায় আড়াই হাজার সিসি ক্যামেরা বসিয়ে চলছে নজরদারি। তীর্থ পর্যটনে এই ভক্ত-সমুদ্র মন্থন করে বাড়তি উপার্জনের আশায় উজ্জীবিত প্রয়াগের মাঝিরা। এক মাঝি বলেন, ‘প্রশাসনের তরফে আমাদের আই কার্ড দেওয়া হয়েছে। যাতে পুণ্যার্থীরা স্নান সেরে নিরাপদে বাড়ি ফেরেন। আইন-কানুনের তরফে যা বলা হয়েছিল আমরা তার সব ব্যবস্থা করেছি।’
মহাকুম্ভকে ঘিরে প্রয়াগ যখন মায়ানগরীতে পরিণত হয়েছে, তখন আমাদের ঘরের কাছের গঙ্গাসাগর যেন ডুবসাগরে কাঁচা সোনা…। আলোর মালায় সেজে উঠেছে কপিল মুনির মন্দির। কথায় কথায় বারবার চলে আসে কুম্ভের সঙ্গে গঙ্গাসাগরের তুলনা। কিন্তু, চরিত্রগত দিক থেকে দুই মেলা পুরোপুরি আলাদা। হরিদ্বার, প্রয়াগ বা উজ্জয়িনী, কুম্ভমেলা সব সময়ই হয় মূল ভূখণ্ডে। আর গঙ্গাসাগর মূল ভূখণ্ডের বাইরে এক প্রান্তিক দ্বীপ। ভাগীরথী, মুড়িগঙ্গা, বড়তলা নদী আর বঙ্গোপসাগরে ঘেরা সেই গঙ্গাসাগর জনপদ এখন থেকেই পুণ্যার্থীদের ভিড়ে গমগম করছে। হবে নাই বা কেন ! সারা দেশে এটাই হল সেই জলবেষ্টিত দ্বীপ, যেখানে একটিই সর্বভারতীয় ধর্মীয় মেলা হয়…।
নিরাপত্তায় কড়া নজরদারি…। অহরহ পুণ্যার্থীদের যাতায়াত…। নানা দেশের, নানা প্রদেশের মানুষের হাঁকডাক…। সংক্রান্তির মুখে আবার মিনি ভারত গঙ্গাসাগর…।
আরও দেখুন