সেলিম রেজা, ঢাকা: বদলের বাংলাদেশের রাজনীতি ও বৈদেশিক সম্পর্কে জোরাল গুঞ্জন প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারের রাজ্য আরাকানের স্বাধীনতা নিয়ে। আরাকান কি আসলে জাতি সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিবেচনায় পূর্ব তিমুরের মতো স্বাধীন হচ্ছে? পূর্ব তিমুর ছিল ইন্দোনেশিয়ার একটি দ্বীপ রাজ্য। এটি ‘খ্রিস্টান রাষ্ট্র’ হিসেবে ২০০২ সালের ২০ মে স্বাধীনতা লাভ করে। আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটি তখন থেকে ‘ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব তিমোর-লেস্ট’ নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন: Soudi Arab on Palestine’s hajj pilgrimage: যুদ্ধধ্বস্ত প্যালেস্টাইনের পাশে সৌদির বাদশাহ, ১০০০ ধর্মপ্রাণকে নিখরচায় হজে আমন্ত্রণ!
ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে তিমুরের সঙ্গে বাণিজ্য শুরু করে পর্তুগিজরা। ওই শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে তারা সেখানে উপনিবেশে স্থাপন করে। ওলন্দাজদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ১৮৫৯ সালে একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, পর্তুগাল দ্বীপের পশ্চিম অর্ধেকাংশ আলাদা করে দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান পূর্ব তিমুর দখল করে। কিন্তু জাপানের আত্মসমর্পণের পর আবারও সেখানে পর্তুগিজদের উপনিবেশ বহাল হয়।
১৯৭৫ সালের ২৮ নভেম্বর পর্তুগাল থেকে নিজেকে স্বাধীন ঘোষণা করে পূর্ব তিমুর। কিন্তু তার নয় দিন পরেই পূর্ব তিমুরকে আক্রমণ করে প্রতিবেশী ইন্দোনেশিয়া। তখন দ্বীপটি ইন্দোনেশিয়ার একটি প্রদেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তী দুই-দশক ইন্দোনেশিয়া পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য বিনিয়োগের মাধ্যমে চেষ্টা চালালেও ব্যাপকভাবে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে সংঘাতে প্রায় এক লাখ ৮০০ মানুষ প্রাণ হারায়।
১৯৯৯ সালের ৩০ আগস্ট জাতিসংঘ-প্রস্তাবিত গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয় পূর্ব তিমুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ান সামরিক বাহিনীর সমর্থনে স্বাধীনতাবিরোধী মিলিশিয়ারা ব্যাপক জ্বালাও-পোড়াও শুরু করে। তারা প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন তিমোরিকে হত্যা করে এবং ৩ লাখ মানুষকে শরণার্থী হিসেবে পশ্চিম তিমুরের দিকে ঠেলে দেয়। ১৯৯৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সেখানে ইন্টারন্যাশনাল ফোর্স ফর ইস্ট তিমুর (ইন্টারফেট) মোতায়েন করার পর ধীরে ধীরে হিংসার অবসান ঘটে। সংকট সমাধানের জন্য ওই বছরের ২৫ অক্টোবর জাতিসংঘ সেখানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন নিয়োগ করে। ২০০২ সালের ২০ মে পূর্ব তিমুর আন্তর্জাতিকভাবে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
মায়ানমারের আরাকান অঞ্চল এখন প্রায় পুরোটাই আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। ফলে এ রাজ্য স্বাধীন হওয়া এখন কার্যত সময়ের অপেক্ষা। মায়ানমারের আরাকান আর্মির সদস্যরা অধিকাংশই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তারা সেখানে মুসলিমমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সম্প্রতি ওই অঞ্চল থেকে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এটা মুসলিমমুক্ত আরাকান প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক ধাপ। এই অঞ্চল ঘিরে ইহুদি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের। এটা এখন বাস্তবতার খুব কাছাকাছি বলে মনে করছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা।
সূত্রের খবর, গত মার্চে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিবকে পাশে বসিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সঙ্গে ইফতার করেন। সেখানের সমাবেশে ড. ইউনূসের আগামী বছর রমজানের ইফতার রোহিঙ্গাদের আরাকানে করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেই রাজনীতি ও কূটনীতির ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো আরাকান রাজ্যের স্বাধীন হওয়ার আকাঙ্ক্ষার বিষয়টির অনুমান করতে শুরু করে।
আরও পড়ুন: Pakistan: ‘জঙ্গি’ পাকিস্তানকে অনুদানে আপত্তি ভারতের, অবশেষে টাকা পেতে ১০ দফা শর্ত IMF-র….
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)