কলকাতা: আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় উত্তাল দেশ। সেই আবহেই শান্তিপূর্ণ মিছিল চলাকালীন হামলা চলল হাসপাতালে। সেই নিয়ে এবার আন্দোলনে নামছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে একটানা আন্দোলন চালাবে গেরুয়া শিবির। ঘোষণা করলেন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। (West Bengal BJP)
বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামার কথা জানান সুকান্ত। তিনি জানিয়েছেন, শুক্রবার দুপুর ২টো থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত রাজ্য জুড়ে অবরোধ চলবে। গোটা রাজ্যে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে। বিকেলে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি পর্যন্ত মোমবাতি মিছিল করবে বিজেপি-র মহিলা মোর্চা। (Sukanta Majumdar)
সংবাদমাধ্যমে সুকান্ত বলেন, “প্রত্যেকটি ঘটনা প্রমাণ করছে যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা সামলাতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছেন। আমাদের নির্যাতিতা অভয়ার ন্যায়ের দাবিতে এবং মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে আগামী কাল থেকে বেশ কয়েকটি আন্দোলন শুরু করছে। আগামী কাল সকাল ১১টা থেকে অবস্থান শুরু হবে আর জি করের কাছাকাছি। আমি নিজে কাল রাতে অবস্থান করব। গোটা বাংলায় অবরোধী শুরু করবে বিজেপি, প্রতীকী অবরোধ। মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছি, এই আন্দোলনে এগিয়ে আসুন। কর্মবিরতি পালন করুন দুই ঘণ্টা। বিকেলে হাজরা মোড় থেকে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি পর্যন্ত মশাল মিছিল করবে বিজেপি-র মহিলা মোর্চা।”
আরও পড়ুন: Santunu Sen: তৃণমূলের মুখপাত্র পদ থেকে অপসারিত শান্তনু, RG কর কাণ্ডে সরব হওয়াতেই কি?
এ নিয়ে তৃণমূলের তরুণ নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেন, “আমি শুনলাম, ওঁরা নাকি আর জি করের সামনে অবস্থানের ডাক দিয়েছেন। গতকাল নিজেরা মিলে…কাল মীনাক্ষির নেতৃত্বে DYFY-এর মিটিং ছিল। সেখান থেকে পতাকা নিয়ে ঢুকে ভাঙচুর চালানো হয়। আবার বিজেপি আর জি করের সামনে প্রোগ্রামের ডাক দিয়েছে। আবার একটা ঘটনা ঘটাবেন। ঘটনাগুলি এমন ভাবে ঘটানো হচ্ছে, যাতে আমাদের দিকে ঠেলে দেওয়া যায়। আর রাস্তা আটকে কী হবে? সাধারণ মানুষের রাস্তা আটকানো, অ্যাম্বুল্যান্স আটকানো, হাসপাতালে যাওয়া আটকানো। এমনিতেই মানুষ এখন হাসপাতালে পরিষেবা পাচ্ছেন না। অবরোধের কথা বলছেন, আন্দোলনের কথা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে যাওয়ার কথা বলছেন। বাংলার প্রশাসনিক প্রধান নিজে বুক ঠুকে বলেছেন, ধর্ষকের ফাঁসি চান। ফাঁসি না দিতে পারলে আন্দোলন শুরু করবেন বলেছেন। আর সুকান্ত মজুমদার সেই দল করেন, যাঁরা ধর্ষকদের ধর্ষকদের গলায় মারা পরিয়ে বরণ করেন, মিছিল করেন ধর্ষকদের সমর্থনে। উত্তরপ্রদেশের বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ নিজে ধর্ষণে অভিযুক্ত। ধর্ষকদের পরিবারকে খুনে যুক্ত। আজ বাংলায় তাঁরা কুম্ভীরাশ্রু ফেলছেন। বাংলার মানুষকে বোকা বাননো সহজ নয়। হ্যাঁ, অন্যায় ঘটেছে। কিন্তু একটা-দু’টো ঘটনা দিয়ে বিচার করা যায় না। কলকাতা এখনও দেশের মধ্যে নিরাপদ শহর। রাজ্য সরকার তো প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতার করে! সিবিআই কিন্তু ৭২ ঘণ্টায় আর কোনও গ্রেফতার করতে পারেনি। তদন্ত এখন সিবিআই করছে। সিবিআই-এর উপর চাপ দিন।”
গতকাল আর জি করে হামলার ঘটনায় দেবাংশুর দাবি, “শান্তিপূর্ণ এবং অরাজনৈতিক আন্দোলনকে বিজেপি, সিপিএম হাইজ্যাক করতে চাইছে বলে প্রথম থেকে বলে আসছি আমরা। তাদের গুন্ডারা ঢোকে। যেখানে ভাঙচুর হয়েছে, সেখানে জমায়েত করেছিস মীনাক্ষির নেতৃত্বে DYFI. আমাদের কাছে ক্লিপিং এসেছে, যেখানে সংগঠনের পতাকা নিয়ে আর জি করে লোক ঢুকতে দেখা গিয়েছে। ইচ্ছা করে ঘটানো হয়েছে সিপিএম-এর তরফে। ছবি দেখা গিয়েছে। প্রকাশ্যে যাদের দেখা গিয়েছে, তার কোন দলে যুক্ত স্পষ্ট হয়ে যাবে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির চেষ্টা চলছে।”
এ প্রসঙ্গে সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, “কে দেবাংশু কী বলে, তার জবাব দেওয়া আমার পক্ষে সমীচীন নয়। মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই ব্লু প্রিন্ট তৈরি হয়েছে। ধর্নামঞ্চ ভেঙে দিল, তিনতলা পর্যন্ত চলে গেল, ভাঙচুর চালাল। মুখ্যমন্ত্রী ভয় পেয়েছেন। তাই গুন্ডাবাহিনী নামিয়ে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। DYFI হামলা চালালে পুলিশ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকত! মেরে ভাগিয়ে দিত। পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকে দেখেছে। মুখ্যমন্ত্রী পুলিশমন্ত্রী হিসেবেও ব্যর্থ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবেও ব্যর্থ।”
আরও দেখুন