বাড়ির সামনেই মহিলার গলার হার ধরে টান, শহরে ফের দুঃসাহসিক ছিনতাই, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

কলকাতা: খাস কলকাতায় বেপরোয়া দুষ্কৃতীরা। পথচারী মহিলার সোনার হার ছিনতাইয়ের চেষ্টা তিন বাইক আরোহীর। ব্যর্থ হয়ে বাইক থেকে নেমে চোখ রাঙানিও। অভিযোগ, শেষ পর্যন্ত হার খুলে নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। কলকাতার অভিজাত এলাকায় এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। শহরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে যেমন, পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন ওই মহিলা। (Kolkata News)
শনিবার বিকেল পৌনে ৫টা নাগাদ ঢাকুরিয়া ঝিল পাড় রোড ধরে আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন সেলিমপুর রোডের বাসিন্দা পিয়ালি দে রায়। অভিযোগ, প্রথমে চলন্ত বাইক থেকেই তাঁর গলায় থাকা হার ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে তিন দুষ্কৃতী। হার ছিঁড়ে নিতে ব্যর্থ হওয়ায়, বাইক থেকে নেমে এসে রীতিমতো চোখ রাঙানো হয় তাঁকে। আঙুল উঁচিয়ে, হুমকি দিয়ে হার খুলে নেয় দুষ্কৃতীরা। তার পর চম্পট দেয় তারা। (Kolkata Chain Snatching)
ওই মহিলা জানিয়েছেন, পুলিশের উপর একেবারে ভরসা নেই তাঁর। তাই প্রথমে থানায় যাননি তিনি। ওই মহিলার ছেলে বেঙ্গালুরুতে চাকরি করেন। তাঁর হস্তক্ষেপেই শেষ পর্যন্ত গড়ফা থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। ওই মহিলা জানিয়েছেন, নিজের শহরে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি। স্বামী শঙ্খ দে রায়কে নিয়ে ছেলের কাছে চলে যেতে চান। বিডন স্ট্রিট থেকে দমদম ক্যান্টনমেন্ট, শহরে কী ভাবে এত বেপরোয়া হয়ে উঠছে দুষ্কৃতীরা, উঠছে প্রশ্ন।
ওই মহিলা বলেন, “তিনটি ছেলে আমার পাশে বাইক নিয়ে দাঁড়ায়। হঠাৎ একটা ছেলে বলল, ‘ওই ফ্ল্যাটটার দিকে দেখ!’ আমি সেটা শুনে তাকাতে গিয়েছি। সেই সময় পিছন থেকে টান দিয়েছে। টান দেওয়ায় হারটা পুরোটা নিতে পারেনি, আমি বুঝতেও পারিনি। এর পর আমার সামনে এসে, একেবারে চোখ রাঙিয়ে, আঙুল তুলে হারটা ছিনিয়ে নিল। আমি প্রতিবাদও করিনি। আমি নিজে বাঁচতে চেয়েছিলাম শুধু। কিছু অস্ত্র থাকলে কুপিয়ে দিতে পারত।”
পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলে ওই মহিলা বলেন, “পুলিশের উপর কোনও বিশ্বাস নেই, একেবারেই নেই। এত বড় অভয়া কাণ্ড হয়ে গেল। পুলিশের ভূমিকা তো সাংঘাতিক ছিল সেখানে! কী হল? সবাই তো ছাড়া পেয়ে গেল! যাদের গেল, তাদের গেল। কলকাতার অবস্থা খুব খারাপ। সব দিক থেকে আমরা ১০০ শতাংশ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।” মহিলার স্বামীও জানিয়েছেন, তিনি কলকাতায় থাকতে ভরসা পাচ্ছেন না আর।
এই ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ। কিন্তু নিরাপত্তার প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। কারণ সম্প্রতি কলকাতার একাধিক জায়গায় এমন মারাত্মক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। জনবসতি পূর্ণ এমন ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে। নাগরিক নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের উপর হারাতে বসেছেন বলে একাধিক বার মুখ খুলেছেন শহরবাসী।
এর কিছুদিন আগে, ১২ ফেব্রুয়ারি, সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউয়ে তিন তলা বাড়ির মালকিন, এক বৃদ্ধা বাড়িতে ধারাল অস্ত্র নিয়ে ঢুকে যায় এক দুষ্কৃতী। সোনা-টাকা নিয়ে চলে যায়। এখনও সেই দুষ্কৃতী ধরা পড়েনি। এমন পরিস্থিতিতে ভিন রাজ্য থেকে ওই মহিলার মেয়ে ছুটে এসে, অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে মাকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যান। এর পর ১৭ ফেব্রুয়ারি দমদমে জানলার গ্রিল কেটে ঢুকে বৃদ্ধ দম্পতির বাড়িতে লুঠপাট চলে। একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে। পুলিশে অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয় না বলে মত শহরবাসীর একাংশের।
এমন পরিস্থিতিতে প্রাক্তন পুলিশকর্তা সলিল ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, “সন্ধেবেলা মহিলার হার ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে, এমনটা শুনিনি আমরা। কলকাতার বুকে অন্তত হয়েছে বলে জানি না। অপরাধ যদি চিহ্নিত না করে, প্রতিরোধ না করে, কলকাতা পুলিশের ক্ষমতা কিন্তু খর্ব হচ্ছে! এত চাপ হয়ে যাচ্ছে, পেরে উঠছে না। এটা রাজ্য সরকারের চরম ব্যর্থতা বলে মনে করি আমি।”
আরও দেখুন