‘আমি বিধানসভার আসবাব ভাঙিনি, কাগজ ছিঁড়েছিলাম, কিন্তু…’, বিধানসভায় শুভেন্দুকে জবাব মমতার

কলকাতা: রাজনৈতিক আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণে বার বার উঠে এসেছে অতীত। সংসদে কাগজ ছোড়া থেকে বিধানসভা ভাঙচুরের ঘটনায় বার বার আঙুল উঠেছে তাঁর দিকে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবার সেই নিয়ে মুখ খুললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। কেন সংসদে কাগজ :ছিঁড়েছিলেন, জানালেন। সেই সঙ্গে জানালেন, দল উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল বটে। কিন্তু তিনি নিজে কোনও আসবাব ভাঙচুর করেননি।
সোমবার রাজ্য বিধানসভায় স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে লক্ষ্য করে কাগজ ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। সেই নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপি-র বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল, বিশ্বনাথ কারক এবং বঙ্কিম ঘোষকে একমাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয় রাজ্য বিধানসভা থেকে। সেই নিয়ে শুভেন্দুকে বলতে শোনা যায়, “আমরা কাগজ ছিঁড়ে ফেলেছি, বিজনেস মানি না। ২০০১ থেকে ২০১১, তৃণমূল যখন বিরোধী ছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এসে বিধানসভা ভেঙে দিয়ে গিয়েছিলেন। লোকসভায় সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে চাদর, কাগজ ছুড়ে কে মেরেছিল? দেখেননি আপনারা? একটাই কারণ হিন্দুদের পক্ষে বলা যাবে না।”
মঙ্গলবার বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণের জবাবে বলতে উঠে শুভেন্দুর আক্রমণের জবাব দেন মমতা। ২০০৫ সালে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ইস্যুতে উত্তাল হয়েছিল সংসদ। সংসদে স্পিকারের আসনের দিকে কাগজ ছোড়ার পাশাপাশি, কাঁদতে দেখা যায় মমতাকে। সে প্রসঙ্গে এদিন মমতা বলেন, “আপনারা অনেকে আছেন সংখ্যায়। আমি যখন কাগজ ছিঁড়েছিলাম, আমি একা ছিলাম। বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম…একসঙ্গে আমার বিরুদ্ধে, আমাকে…সাত দিন ধরে…একটা কথা বলতে দিত না। একটা প্রশ্নের উত্তর দিত না। ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়েও ২০০৪ সালে আমি যখন একা হয়ে গিয়েছিলাম, আমাকে ভাষণ দিতে দেওয়া হতো না। বিশেষ মেনশন করতে দিতে হতো না। আমি সংসদে একা বসে আছি। আমার একটা কবিতা আছে ‘একা’। কেন লিখেছিলাম? উপলব্ধি থেকে, যে ওরা রোজ বলে। আমাকে বলতে দেওয়া হয় না। সেদিন মনে হয়েছিল, এরা তো রোজ বলে! কিন্তু বক্তব্য রাখতে গিয়ে অসংলগ্ন কথা বলা যায় না।” এদিন মমতা জানান, বর্তমানে রাজ্য বিধানসভায় ৫০ শতাংশ সময়ই বিরোধীদের দেওয়া হয়। তার পরও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা করা হচ্ছে।
বিধানসভায় ভাঙচুরের যে কথা শোনা যায় শুভেন্দুর মুখে, তা ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বরের ঘটনা। সিঙ্গুরে যেতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হন মমতা। এর পর সটান বিধানসভায় চলে আসেন। সেই সময় তাঁর উপস্থিতিতে লবিতে ভাঙচুর চালাতে দেখা যায় তৃণমূলের কয়েকজনকে। গতকাল সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরেছিলেন শুভেন্দু। আজ জবাব দিতে গিয়ে মমতা বলেন, “আমি সিঙ্গুরে ঢুকতে দেয়নি। আমি সেখান থেকে ফিরে এসেছিলাম বিধানসভায়। সেই সময় বিরোধী দলনেতা ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসছিলাম। আমি বিধানসভার কোনও আসবাব ভাঙচুর করিনি। সেই সময়ে আমার দল উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। আমাকে প্রমাণ দিতে হবে।” এর আগেও, রাজ্য বিধানসভায় এ প্রসঙ্গ উঠেছিল। সেবারও মমতা জানিয়েছিলেন, তাঁর জুতো পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। সেই নিয়ে সিপিএম-এর যুক্তি ছিল, নিজে হাত দিয়ে না ভাঙলেও, মমতার সামনেই ভাঙচুর চলেছিল। মমতা সেই সময় উপস্থিত ছিলেন বিধানসভায়।
আরও দেখুন