শুভেন্দুর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস, ‘এত প্ররোচনার পরও পশ্চিমবঙ্গ শান্ত”, বলেলন স্পিকার

কলকাতা: একদিন আগেই সাসপেন্ড করা হয়েছে বিধানসভা থেকে। এবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস আনা হল। রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্য়ায় শুভেন্দুর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস এনেছেন। তাঁর দাবি, সাসপেন্ড হওয়ার পর সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করেছেন শুভেন্দু। এ নিয়ে মুখ খুলেছেন রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শুভেন্দুর মন্তব্য সংবিধানের পরিপন্থী এবং সেই প্ররোচনায় পা দিলে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়াবে বলে জানালেন তিনি। (Suvendu Adhikari)
গতকালই বিধানসভা থেকে সাসপেন্ড করা হয় শুভেন্দু-সহ চার বিজেপি বিধায়ককে। এর পর সংবাদমাধ্যমে যে বিবৃতি দেন শুভেন্দু, তার ভিত্তিতেই স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস এনেছেন তৃণমূল বিধায়করা। শুভেন্দুর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস এনেছেন শোভনদেব, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস এবং দেবাশিস কুমার। অধ্যক্ষ বিমান সেই নোটিস গ্রহণ করেছেন। সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করে শুভেন্দু স্বাধিকার ভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ। আগামী অধিবেশনে, ১ থেকে ১৯ মার্চের মধ্যে এ নিয়ে রিপোর্ট দেওয়া হবে। (West Bengal Assembly)
গতকাল সাসপেন্ড হওয়ার পর সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেন শুভেন্দু। পুলিশি প্রহরায় সরস্বতী পুজো করার প্রসঙ্গে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “এই সরকার মোল্লাদের সরকার। এই সরকার মুসলমানদর সরকার। এই সরকার কাশ্মীরি জঙ্গি জাভেদ মুন্সির সরকার। এই সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মুসলিম তোষণকারী, হিন্দুবিরোধী, মুসলিম লিগ-২-এর সরকার।” সেই নিয়েই শুভেন্দুর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস আনা হয়। পাশাপাশি, মঙ্গলবার বিশেষ উল্লেখ পর্বেও শুভেন্দুকে ধিক্কার জানানো হয়। ফিরহাদ সেখানে বলেন, “গতকাল বিধানসভায় যা ঘটেছে, তা অত্য়ন্ত লজ্জাজনক। আমাদের মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে। বিরোধী নেতার আচরণে সকলে লজ্জিত। ধর্মনিরপেক্ষ দেশে বিধায়ক হিসেবে সকলে সংবিধানের শপথ নিয়েছেন। তার পরও বিরোধী দলনেতা যেভাবে সাম্প্রদায়িক কথা বলছেন, তাতে সংবিধানের অসম্মান হচ্ছে।”
হিন্দুদের ভোটে জিতেছেন, মুসলিমদের ভোটে নয় বলেও গতকাল মন্তব্য করেন শুভেন্দু। সেই নিয়েও তাঁর তীব্র সমালোচনা করেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতায় আঘাত হানা হচ্ছে, বিরোধী দলনেতা চেয়ারের মর্যাদার অসম্মান করছেন এবং বিধানসভার সংখ্যালঘু সদস্যদের অসম্মান করছেন বলে জানান তিনি।
শুভেন্দুরদের সাসপেন্ড করা নিয়ে স্পিকার বিমান বলেন, “বাইরে দাঁড়িয়ে আস্ফালন করছেন। প্রিভিলেজ কমিটিতে গিয়ে জবাব দিন ওঁরা।” বিধানসভার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে, আবেদন করলে সাসপেনশনের বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে বলেও জানান। শুভেন্দুর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস নিয়ে বিমান বলেন, “এটা অবশ্যই গর্হিত কাজ। যে বিবৃতি দিয়েছেন, তা সংবিধানের পরিপন্থী। সমালোচনা করতেই পারেন। ব্যক্তিগত ভাবে আমারাও সমালোচনা করতে পারেন আপনি। কিন্তু সংবিধানের মূল ভিত্তিতে যদি কেউ কুঠারাঘাত করেন…আমি মর্মাহত। আপনারাও নিশ্চয়ই মর্মাহত! কী বলছেন উনি, মোল্লাতন্ত্র! আমি তো ভাবতেই পারি না। যে ধরনের প্ররোচনা উনি দিচ্ছেন, তাতে পশ্চিমবঙ্গ যে এখনও শান্ত আছে, এটা যথেষ্ট। ওঁর প্ররোচনা পা দিলে, অশান্তি হতে পারে। দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে চাইলে এই ধরনের বিবৃতি বন্ধ করা উচিত ওদের। বুঝতে হবে। ক্ষমা চাওয়া উচিত মানুষের কাছে।” বিধানসভা দুর্বল নয়, বিধানসভাকে দুর্বল মনে করা উচিত নয় বলেও জানান স্পিকার বিমান।
আরও দেখুন