হয়নি ময়নাতদন্ত, নেই ডেথ সার্টিফিকেট, এভাবেই কুম্ভে প্রিয়জনের নিথর দেহ ফেরত পাচ্ছে পরিবার !
ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, করুণাময় সিংহ, কলকাতা: করা হয়নি ময়নাতদন্ত, দেওয়া হয়নি ডেথ সার্টিফিকেট। এরকম অবস্থাতেই, কুম্ভে যাওয়া প্রিয়জনের নিথর দেহ ফেরত পাচ্ছেন পরিজনরা। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি ২৫ লক্ষ করে আর্থিক সাহায্য় না দিতেই মৃতের সংখ্য়া লুকোতে চাইছে উত্তরপ্রদেশ সরকার? অন্তত তেমনটাই মনে করছে এরাজ্যের স্বজন হারা মানুষগুলি। এদিকে ডেথ সার্টিফিকেট না পেয়ে মৃতদেহ সৎকার করাতে পারছে না পরিবার। এই পরিস্থিতিতে আশ্বাসের রাজ্য় বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, এরাজ্যের মৃতদের ডেথ সার্টিফিকেট পাইয়ে দিতে, যোগী সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।
পুণ্য করতে গিয়েছিলেন প্রয়াগরাজে। বাড়িতে ফিরল প্রাণহীন দেহ। মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার জেরে মেলার প্রস্তুতিতে খামতি থেকে শুরু করে, বিপর্যয়ের পর মৃতের সংখ্য়া লুকোনোর মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্য়নাথের সরকারের বিরুদ্ধে। এরইমধ্য়ে নতুন এক বিতর্কও তৈরি হয়েছে। ময়নাতদন্ত না করিয়েই মৃতদেহ পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ভিন রাজ্যে পরিবারের কাছে। এমনকী ডেথ সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়নি।এই বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন বাংলার মৃত পূণ্যার্থীদের পরিবার।
বৈষ্ণবনগরের বাসিন্দা মৃত অমিয় সাহার বন্ধু অভিজিৎ সাহা বলেছেন, ‘ওরা বলল, এখান থেকে চলে যান আপনারা। এখানে কোনওকিছু দেওয়া হবে না, চলে যান এখান থেকে। না গেলে আপনাদেরই সমস্যা আছে।’ উত্তরপ্রদেশ সরকার ২৫ লক্ষ করে আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেছে। রেকর্ড রাখলে, সেই টাকা দিতে হবে। কী মনে করছেন? এই কারণেই কি রেকর্ড রাখা হচ্ছে না? এবিপি আনন্দ এর প্রশ্নে ,উত্তর এল,’ হয়তো এই জন্য রেকর্ড দিতে চাইছে না।’
একইরকম তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন জামুড়িয়ার বাসিন্দা মৃত বিনোদ রুইদাস ও শালবনির ঊর্মিলা ভুঁইয়ার পরিবারও। মৃত ঊর্মিলা ভুঁইয়ার নাতনি মৌমিতা মাহাতো বলেন, আমি বলেছিলাম, ময়নাতদন্ত করুন বা ওষুধ দিয়ে দিন। আমরা এতদূর পথ নিয়ে যাব তো। তারা বললেন, এসব কাজে এসব হয়। আর এখন সময়ও নেই এসব করার।’
এদিন আসানসোল জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়েছে, জামুডিয়ার বিনোদ রুইদাসের মৃতদেহের। নিয়ম অনুযায়ী ডেথ সার্টিফিকেট না থাকলে শ্মশানে মৃতদেহ দাহ করা যায় না। তাই বিপাকে পড়তে হয়েছে বিজয়গড়ের বাসিন্দা বাসন্তী পোদ্দারের পরিবারকেও। তাঁকে সৎকার করার জন্য ক্রিমেশন সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে এম আর বাঙুর হাসপাতাল থেকে। এরপর শুক্রবার কাটাপুকুরে ময়নাতদন্তের পর তাঁর দেহ দাহ করা হয়েছে।
মৃত বাসন্তী পোদ্দারের ছেলে সুরজিৎ পোদ্দার বলেন, আর্থিক সাহায্য দিতে না চাওয়ায় ডেথ সার্টিফিকেট দেয়নি। ২৯ তারিখ মৃত ঘোষণা। ৩০ তারিখ কলকাতায় এলাম। এম আর বাঙুরে ক্রিমেশন সার্টিফিকেট। সেখানে মৃত্যুর তারিখ উল্লেখ ৩০ তারিখ। পরবর্তীকালে সমস্যা হতে পারে। অর্থাৎ মৃত্য়ু হয়েছে প্রয়াগরাজে। ময়নাতদন্তে হচ্ছে বাংলায়!
প্রাক্তন পুলিশকর্তা সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,মৃত্যুর কারণ লিখতে হয়। অস্বাভাবিক ভাবে মৃত্যু হলে ময়নাতদন্ত মাস্ট। প্রথম সমস্যা হবে কোন বীমা থাকলে বীমা সংস্থা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট চাইবে। ডে সার্টিফিকেট চাইবে। এটা শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা উত্তরপ্রদেশের জন্য না গোটা ভারতবর্ষে এটাই নিয়ম। যখনই ২৫ লাখ টাকা দেবে সেটা সরকারের ফান্ড থেকে দিতে হবে। এটা যদি করতে হয় তাহলে মৃত্যুর কারণ কখন মারা গেছে কীভাবে মারা গেছে সবকিছু লিখতে হবে। এটা ইললিগাল। এই পরিস্থিতিতে আশ্বাসের সুর শোনা গেছে রাজ্য় বিজেপির সভাপতির গলায়।
আরও পড়ুন, ২৮ এই সব শেষ, মহাকুম্ভে গিয়ে সন্তানের মৃত্যু দেখত হল পরিবারকে ! মা-বাবা বলে আর যে কেউ ডাকবে না..
বিজয়গড়ের বাসন্তী পোদ্দার (৬০) ও শালবনির ঊর্মিলা ভুঁইয়া (৭৫)-র মৃত্যুর খবর বৃহস্পতিবারই পাওয়া গিয়েছিল। সেই তালিকায় যোগ হল আরও ৩টি নাম।বৈষ্ণবনগরের অমিয় সাহা (২৮), পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়ার বিনোদ রুইদাস,এবং রামপুরহাটের গায়ত্রী দে।
আরও দেখুন