স্বরূপ দত্ত
করণ জোহর আপনি আপনার নতুন সিনেমার নামটা দারুণ দিয়েছেন। ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’! নতুন কিছু করেননি। পুরনো গানের কলি দিয়েই সিনেমার নাম দিয়েছেন। যেটা আজকের দিনের ট্রেন্ড। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে হলেও আপনার সিনেমার নাম আমাদের বাস্তব জীবনের সঙ্গে যে বড্ড সঙ্গত। আপনার সিনেমায় আপনি কী দেখালেন, সে তো দেখার পর বুঝবো। কিন্তু তার আগে আপাতত অমিতাভ বচ্চন যা দেখাচ্ছেন, তাতে পরিষ্কার যে, আমাদের এই ‘দিল’-এর সত্যিই বড় মুশকিল! অমিতাভ বচ্চন তো এই ‘বুড়ো’ বয়সেও করণ জোহর আপনার সিনেমার ‘বোল্ড’ দৃশ্য দেখে আবার সেই ৭-এর দশকের অ্যাংগ্রি ইয়াংম্যানের মেজাজে! রেগে আগুন হচ্ছেন আর করণ জোহরকে অনুরোধ করছেন, সিনেমাতে কাঁচি চালাতে! সেন্সর বোর্ডের কাজ তো নিজেই দায়িত্ব নিয়ে করছেন দেখছি বিগ বি! ভুলই বা কী করছেন? আমার ঘরের বউমা! তাঁকে সিনেমায় দেখা যাবে গায়ে চকোলেট মাখা অবস্থায়! আর সেটা নাকি ‘চেটে’ দেবেন অন্য এক ‘ছেলে’! এসব ভারতীয় হিসেবে সহ্য করা যায়? মানে যাবে না কেন? কিন্তু মানাতে তো একটু সময় লাগবেই।
অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিলের সেই চকোলেটের দৃশ্যে নাকি ইতিমধ্যে করণ জোহর ‘কাঁচি’ চালিয়েই দিয়েছেন। এবার লিপ লক নিয়ে পড়েছেন অমিতাভ। ইউটিউবে বেশ কয়েকবার দেখলাম, রণবীর যে ঐশ্বর্যকে চুমু খাচ্ছেন, এটা বুঝতে পাঁচ বছরের বাচ্চারও কোনও অসুবিধা হবে না। কিন্তু চুমুটা দেখতে কিন্তু শুধু চশমা নিলে হবে না, আপনাকেও ক্যামেরাম্যান হয়ে যেতে হবে। কোনও অ্যাঙ্গেলেই চুমুটা ঠিক ঢেকুর ওঠার মতো দেখা যাচ্ছে না। তাতেও সহ্যের সব দিওয়ার ভেঙে অগ্নিপথে হাঁটা শুরু করে দিলেন শাহেনশা। ভালো। আপনার পারিবারিক বিষয়। আপনি থাকুন। ওতে ঢোকার ইচ্ছে কিংবা ক্ষমতা কোনওটাই আমার নেই। কিন্তু এই বিষয়ে কটা কথা বলতে ইচ্ছে করছে। তবুও শুরুর আগে বলে নেওয়া ভালো। আমি এখন ৭০ নই বয়সে। কিন্তু আমার বউমাকেও সিনমার পর্দায় ওভাবে দেখলে একটু খারাপ তো লাগতোই। কিন্তু এটা বলার পরই যে আঙুলগুলো নিজের দিকে ধেয়ে আসছে! মুখ লুকোবো কীভাবে? কেন, কীভাবে, সেগুলোই বলি এক এক করে।
এক – অমিতাভ বচ্চন আপনাকে পর্দায় দেখে কী রোমাঞ্চিত হই আমরা। আপনি অমিতাভ বচ্চন, আপনার গলা শুনলে কানটা, প্রাণটা জুড়িয়ে যায় এখনও। আপনার গাওয়া নীলা আসমা সো গয়া হেড সেটে শুনতে শুনতেই তো এই লেখাটা লিখছি। কিন্তু পর্দার বাইরের অমিতাভের কথা ভাবতে গেলে, যে খারাপ লাগাও আছে অনেক। বাকি সব বিষয় প্রাসঙ্গিক নয়। কারণ, রাজীব গান্ধি-অমর সিং, রাজনীতিতে আপনি ভালো, ভালো, ভালো বলার মতো কিছু করেননি। কিন্তু অভিষেকের বিয়ে দেওয়ার আগে ঐশ্বর্যকে নিয়ে যে হাঁটাতেন, বেশ কয়েকবছর আগে তারকেশ্বরে যাওয়া ভক্তদের কথাই মনে হতো। ঐশ্বর্যর মঙ্গল, শনি, রাহু, কেতু সব দশা কাটাতে আপনাকে কম হাঁটতে হয়েছে! কী কষ্ট! হবু বউমাকে গাছগাছালির সঙ্গেও বিয়ে দিয়েছেন! কিন্তু তাতে আমাদের কী? আপনার পরিবার, আপনার ঘর-সংসারের জন্য আপনি যা খুশি করতে পারেন। আমার ব্যক্তিগত কোনও আপত্তির প্রশ্নই নেই। বরং, এগুলো করার সময় আপনি অন্য মানুষকে দুঃখও দেননি। তবু, আমরা যে আইকনদের দেখি। অনুকরণ করি। তাই…..
দুই, – একেই বলে কপাল অথবা ধর্মের কল বাতাসে নড়ে কিংবা অ্যায় দিল অ্যায় মুশকিল! – আপনার-রেখার-জয়ার ত্রিকোন সম্পর্ক তো ত্রিভুজের উদাহরণ দিতে জ্যামিতি শিক্ষককেও উদাহরণ দিতে হয়। আর আপনার বাড়িতে বউমা হয়ে আসলেন যিনি, সেই ঐশ্বর্য রাই-ও তো সলমনের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন সম্পর্কে। অত বছর আগের সম্পর্কের কথা হঠাত করে ১৫ দিন আগে দেখলাম খবরের শিরোনামে! ঐশ্বর্য রাই সলমনের সম্পর্কে অনেক খারাপ স্মৃতির কথা বলেছেন। আপনাদের ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু মুশকিল যে সব ওই মনেই!
তিন – আজ লক্ষ্মীপুজোর দিনেই সবথেকে বড় খবরগুলোর অন্যতম অমিতাভ বচ্চন আপনার রাগের কথা! ভাবছিলাম, আপনার মতো বড় মানুষ থেকে আমাদের মতো সাধারণ, লক্ষ্মীকে বাড়িতে তো ডাকি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্মীর শ্রী-রও বোধহয় দরকার নেই। আমাদের লক্ষ্মীর পেঁচাকেও দরকার নেই। আমাদের দরকার কিনা লক্ষ্মীর ওই ঐশ্বর্যই! আর আপনি তো বাড়িতে সত্যিকারের ঐশ্বর্যই নিয়ে এসেছেন পূত্রবধু করে! রূপে বিশ্বসুন্দরী। রূপটা কী গুণ নয়? কিন্তু সেই লক্ষ্মী করবেন কী আমাদের ঘরে এসে? সেজেগুজে বসে থাকবেন আর আপনা-আপনি বাড়িতে টাকার ঘট উপচে পড়বে!
চার – যত দোষ নন্দ ঘোষ নয়, দিলেরই! – আপনি গোটা কেরিয়ারে কার বাহুডোরে আবদ্ধ হননি! সেদিনের হেলেন, পারভিন ববি থেকে স্মিতা পাতিলদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে। আর আজকের রানী মুখার্জি থেকে প্রয়াত জিয়া খান, পর্দায় তো আপনাকে চুমু খেতে দেখেছি! ইউটিউবে হাজার বার দেখা য়ায়, আপনি আপনার বউমা ঐশ্বর্য রাইকে চুমু খাচ্ছেন সবার সামনেই। ওটা তো আপনাদের বড় মানুষদের সংস্কৃতিই আজকাল। খারাপ তো লাগেনি দেখে। আপনার নিজের কি কখনও মনে হয়েছে, এই দৃশ্যগুলো দেখে বাঙালি মনের নারী আপনার স্ত্রী, জয়া বচ্চনের মনটা কেমন করে উঠেছে! কী বোঝাতেন তখন? আপনার এটা কাজ? কোনও খারাপ বিষয় নয়? ঠিকই তো বলতেন বা বলেন। অভিনয় আর বাস্তব তো এক নয়। কিন্তু ঐশ্বর্যও তো রণবীরের সঙ্গে অভিনয়ই করেছেন। তাহলে? এই হল আমাদের মনের দোষ। দুটোতেই আপনি ঠিক। নিজের বেলায় অভিনয়। আর বউমার বেলায় মান সম্মাণ! আমরা পুরুষরা আসলে এমনই। জানি না এটা ঠিক না খারাপ। তবে, অবিচার বোধহয় লক্ষ্মীদের উপরেই হয়। কারণ, আমাদের সবার লক্ষ্মী দরকার। কেউ ভাবি না, লক্ষ্মী আমার বাড়িতে এসে করবেন কী? তাঁকে তো আমাদের দরকার নেই। দরকার যে তাঁর ধামা, ঘট, কড়ি, অর্থ।
পাঁচ – আজ এই ঘটনায় আপনার নুতনের সঙ্গে করা সেই সওদাগর সিনেমার কথা মনে পড়ে গেল। রূপ আর ‘গুড়’ সব একজায়গাতে পাওয়া যায় না। তবু, ব্যাতিক্রমীভাবে পাওয়াও যায়। যেমন সওদাগরের নুতন ছিলেন। কিন্তু আমাদের পুরুষদের যে, আরও চাই…….। নিজের বেলায় বুঢ্ঢা হোগা তেরা বাপ। কিন্তু বাড়িরে মেয়েদের বেলায়? ধন্যি মেয়ে বিয়ের আগে হও। কিন্তু বিয়ের পরে? একদম শান্ত হয়ে বাড়িতে বসে থাকো। আসলে দোষ নেই আপনার কোনও। অথবা আছে পুরোটাই। তবে, এটুকু জানি, আপনার মতো বড় মানুষের মতোই এ দেশের ৫০ কোটি সাধারণ পুরুষ আজকের ২০১৬-তেও এভাবেই ভাবে। সংখ্যাটা কমতে তো একটু সময় লাগবেই। আমি নিজেকেই বা আজ এই ছোঁয়াচে অসুখ থেকে বাঁচাতে পারলাম কই! চেষ্টা করছি। আমার মতোও অনেকে নিশ্চয়ই করছে।
না হলে গোটা দেশ লক্ষ্মীর পূজারী। টাকার জন্য ছুটছে। কিন্তু দেশের জাতীয় পাখি ময়ূর! সে বেলায় আর প্যাঁচাকে মনে পড়ে না কারও! এই লাইনটার অনেক মানে। পরে ভেবে নেবেন।
(এই লেখা একেবারেই আমার ব্যক্তিগত মতামত। এর সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা ডট কম একমত, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। আর সবশেষে-অমিতাভ বচ্চনের নিন্দে করার চেষ্টাও করা হয়নি। আজ যেটা তাঁর পারিবারিক সমস্যা বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, সেটা আসলে আমাদের দেশের সামাজিক সমস্যা। যে সিলসিলা কবে থামবে কেউ জানে না।)
আরও পড়ুন সচিন-দীপা নিজেরা ‘ভুল’ করে সবাইকে আবারও শেখালেন, উপহার দেওয়ার নিয়ম