# Tags
#Blog

লজ্জা শুধু নারীর ভূষণ, পুরুষের ভূষণ তো নির্লজ্জ হওয়া!

লজ্জা শুধু নারীর ভূষণ, পুরুষের ভূষণ তো নির্লজ্জ হওয়া!
Listen to this article


স্বরূপ দত্ত

সত্যিই বদলে গিয়েছে সমাজটা। বড্ড বদলে গিয়েছে। চারপাশে সারাদিন শুধু যৌনতার পরশ! উত্তুরে হাওয়ার দেখা মিলল কী মিলল না কে জানে? কিন্তু এ শহরের রাস্তায় একবার বেরিয়ে পড়লে, যৌনতার সুড়সুড়িতে আপনার শরীরে কিঞ্চিত শিহরণ উঠবেই। মেয়েরা আজকাল আর সুন্দরী হতে চায় না বোধহয়। তাঁদের ‘সেক্সি’ বা ‘হট’ হতে হবে। অথবা ওর সেই একই আছে। আমরাই (পুরুষরা) আমাদের চাহিদা অনুযায়ী ওদের গড়ে নিচ্ছি প্রতিনিয়ত। সাধারণত, সিনেমাই আমাদের দেশের, আমাদের সমাজের ফ্যাশন ঠিক করে দেয়। অমুক সিনেমায় তমুক নায়িকা ওটা পরেছিল, তাই তো আমাকেও পরতে হবে। অথবা অমুক টেলিভিশন সিরিয়ালের তমুক অভিনেত্রী ওই পোশাকটা পরেছিলেন। তাই আমাকেও পরতে হবে। একই পুরুষদের ক্ষেত্রেও। শাহরুখ, সলমন, বরুণ ধাওয়ানরা যা পরেন, সেটাই নকল করে আম-সাধারণ। আর সেই সুযোগটাই নেয় পুরুষরা। পোশাক এমনভাবেই তৈরি হয়, যা শুধু সুন্দরী করে তোলে না নারীকে। করে তোলে ‘হট’ বা ‘সেক্সি’ জাতীয় কিছু।

কিন্তু সিনেমার নায়িকারা যে পরিবেশ, পরিস্থিতিতে চলেন ফেরেন, আমার, আপনার ঘরের মেয়েরা আর সেই পরিবেশ পরিস্থিতি পায় কোথায়! করিনা কাপুর যে পোশাক পরে যাদের মাঝে হাঁটেন, মালদার কাকলি বা নদীয়ার সঙ্গীতা তো সেই পোশাক পরার পর ওই পরিবেশ বা পরিস্থিতিটা পায় না। তাই সমাজে মহিষাদলের খবর রোজই পাওয়া যায়। কামদুনির খবর পাওয়া যায়। এগুলো পুরনো হয়ে গেলে ফের নতুন কোনও খবর। না, ডিমান্ড আপনার এই খবরের যতই থাকুক, সাপ্লাই লাইন রেডি! এই সব বিষয়ে কথা বলতে গেলে অনেক নেতামন্ত্রীদের বা সমাজের নানা স্তরের বিশিষ্টরা প্রায়ই বলেন একটা কথা। মেয়েদের ছোট পোশাকই নাকি সব সমস্যার মূল। যেভাবে আমিও শুরুতে বলেছি কথাগুলো। মেয়েরা ছোট পোশাক পরে, না উত্‍সাহিত করলে পুরুষ তো ভেজা বিড়াল। না, না, মাছ উল্টে খাওয়া তো দূরের কথা, শুঁকেও দেখবে না। পাহাড়া দেবে! তাই ঢুকে পড়ি মূল প্রসঙ্গে। বলতে চাইছি যেটা-

সমস্যা মেয়েদের পোশাকে নয়। সমস্যা একটাই। পুরুষের মনে। পুরুষের চোখে। পুরুষের জন্ম-জন্মান্তর ধরে গড়ে ওঠা অভ্যাসে! কেন বলছি? কারণ, অনেক। আপাতত একটা উদাহরণ দিয়ে, সেটা নিয়েই কথা বলতে চাই। যদি আপনি এই কলকাতা শহরের রাস্তায় চলেন, তাহলে এই বিজ্ঞাপনটা বারবার নজরে পড়বে। যে ছবিটা উপরে রয়েছে। অন্তর্বাসের। ছেয়ে গিয়েছে চারিদিক। (এছাড়াও হাজারো কোম্পানির হাজারো বিজ্ঞাপন রয়েছে/কোম্পানিটা বিষয় নয়/ভাবনাটা বিষয়) আপনার এটা দেখে খারাপ লাগতে পারে। আপনার এটা দেখে ভালো লাগতে পারে। আবার আপনার এটা দেখে কিছুই মনে না হতে পারে। খুব সাধারণ বিষয় হতে পারে। কেন দাদা? পুরুষের শরীর কী শুধুই দেখানোর? নারীকেই বারবার কাঁধে হাত দিয়ে অন্তর্বাসের ফিতে ঠিক করতে হবে? নারীকেই চিরকাল মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করার আগে দেখে নিতে হবে, ওর স্কার্টটা বড্ড ছোট হয়ে গেল না তো? নারীকেই চিরকাল পোশাকটা পরে বুঝে নিতে হবে, ওটা ট্রান্সপারেন্ট (স্বচ্ছ) হয়ে গেল না তো? গা দেখা যাবে না তো? পুরুষের শরীরের দামই নেই! অথবা গঙ্গার জলের মতো? এত পবিত্র যে, সব খুল্লামখুল্লা!

এই যে সারাদিন শহরের মেয়েরা রাস্তার বেরিয়ে পড়ে, বারবার বিরাট বড় বড় হোর্ডিংগুলো দেখছে, ওরা কোথায় বলল যে, পুরুষের এই ছোট পোশাকই মেয়েদের উত্‍সাহিত করছে? মেয়েরা কামদুনির রাস্তায় কটা ছাত্রকে ফেরার পথে তৈরি হওয়া কারখানায় নিয়ে চলে গেল! মহিষাদলে কটা ছাত্র মেয়েদের লালসার শিকার হল? অদ্ভূত নিয়ম যে! মেয়েদের বেলায় পোশাকই যত নষ্টের মূল। আর ছেলেদের বেলায় পোশাক? সেটা কী? খায় না মাথায় দেয়! লজ্জা তো নারীর ভূষণ। পুরুষের ভূষণ তো নির্লজ্জ হওয়া! ভালো সমাজ। ভালো। ঠিক পথে যাচ্ছো এগিয়ে। সবে তো কোমরের সামান্য নিচেই পোশাক নামিয়েছো। নগ্ন হতে এখনও অনেক বাকি! আসলে ওদের কে বোঝাবে – ‘হতভাগা’, লজ্জা শরীরে হয় না। লজ্জা হয় মনে। অন্তর্বাস নামাতে নামাতে মন বড় ‘নিচ’-এ নেমে গিয়েছে। এত ‘নিচ’ থেকে আর ওঠা সম্ভব নয়। তাই, দে গালাগাল নারীর পোশাক নিয়ে।

(এই লেখা একান্তই আমার মত…এর সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা ডট কম একমত হবেই এমন ভাবার কোনও কারণ নেই)





Source link

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Review Your Cart
0
Add Coupon Code
Subtotal